লিবিয়ায় চার জিম্মির একজন পালিয়ে মুক্ত, বাকিদের নিয়ে স্থান পরিবর্তন পাচারকারীদের

লিবিয়ায় পাচারকারী চক্রের কাছে জিম্মি থাকা তিনজন বোরহান উদ্দিন (২১), জাবেদুর রহিম (২০) ও নঈম উদ্দিন (২২)ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়ায় মুক্তিপণের জন্য আটকে রাখা চট্টগ্রামের আনোয়ারার চার তরুণের মধ্যে একজন পাচারকারী চক্রের কবল থেকে পালিয়ে মুক্ত হয়েছেন। ঝুঁকি এড়াতে বাকি তিনজনকে নিয়ে স্থান পরিবর্তন করেছেন পাচারকারী চক্র। আজ শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পালিয়ে মুক্ত হওয়া তরুণের নাম মো. ওয়াসিম (২০)। তিনি আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নুরুল আলমের ছেলে। এখনো পাচারকারী চক্রের কাছে জিম্মি থাকা অপর তিনজন হলেন রায়পুর ইউনিয়নের মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (২১),  আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (২০) ও জেবল হোসেনের ছেলে নঈম উদ্দিন (২২)।

পালিয়ে মুক্ত হওয়া ওয়াসিমের মামা নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, এর শৌচাগারের ভেন্টিলেটর ভেঙে পালিয়ে ওয়াসিম পাচারকারীদের কাছ থেকে মুক্ত হয়েছেন। পরে ওয়াসিম স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাঁদের জিম্মি করে রাখার বিষয়টি জানান। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের যে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে অভিযান চালিয়েছে। তবে এর আগেই পাচারকারীরা বাকি তিন জিম্মিকে নিয়ে স্থান পরিবর্তন করেছে।

নাছির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমার ভাগনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে ভালো আছে, বাকিদের নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।’

বোরহান উদ্দিনের বড় ভাই সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার মুক্তিপণের জন্য কল দিয়েছিল, প্রথমে রিসিভ করিনি। তবে পরে ভাইয়ের ভয়েস মেসেজ পেয়ে কথা বলি। আমার ভাই জানিয়েছে, তাদের মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। গত বুধবার স্থান পরিবর্তন করেছে পাচারকারীরা।’

সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, ‘পাচারকারী চক্রের লোকজনও আমাদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলেছে। মুক্তিপণের জন্য বৃহস্পতিবার এক ঘণ্টা পরপর কল করেছে তারা। তবে আজ (শুক্রবার) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কেউ ফোন করেনি।’

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বৈধপথে লিবিয়া যান চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের এই চার তরুণ। তাঁদের মধ্যে নঈম উদ্দিন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং অপর তিনজন ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া যান।

ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর এলাকার জহিরুল ইসলাম নামের এক দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে লিবিয়া গেছেন চার তরুণ। লিবিয়া নিয়ে যাওয়ার পর একটি হাসপাতালে সবার ভালো চাকরি হয়েছে জানিয়ে তাঁদের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র নিয়ে নেয় পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। এরপর চারজনকে আরেকটি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই চক্রের সদস্যরা চার তরুণকে আটকে রেখে তাঁদের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। মুক্তিপণের জন্য তরুণদের নির্যাতন করে এর ভিডিও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে। মুক্তিপণ পরিশোধ না করলে তরুণদের হত্যা করা হবে জানানো হয়েছে।

পাচারকারীদের হাতে জিম্মি থাকা নঈম উদ্দিনের বাবা জেবল হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলেদের উদ্ধারের জন্য সরকারের সহায়তা চাই।’

জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।