পটুয়াখালীতে সংস্কারকাজ ফেলে রাখায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

পটুয়াখালীতে সংস্কার কাজ ফেলে রাখায় সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়দের বিক্ষোভ করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আজ সোমবার তোলাছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীতে একটি সড়ক সংস্কারের কাজ ফেলে রাখার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে জেলা শহরের লোহালিয়া সেতু–সংলগ্ন জৈনকাঠি এলাকায় ওই বিক্ষোভ করা হয়। এ সময় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।

খবর পেয়ে সদর থানা–পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এর আগে দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবিতে গত ২০ ডিসেম্বর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

আজ দুপুরে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় মো. ফারুক গাজী, কুদ্দুস বয়াতি, জসীম গাজী, পিন্টু সরদার ও শাওন সরদার বলেন, সড়ক সংস্কারের নামে দীর্ঘ এক বছর ধরে পচা ইট সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে। এসব ইটের ডাস্ট বাসাবাড়িতে ঢুকে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী নষ্ট করছে এবং শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারের গাফিলতিতে অন্তত পাঁচ শ পরিবার ভোগান্তিতে রয়েছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী-বাউফল রুটের লোহালিয়া সেতুর সংযোগ সড়কসহ সংশ্লিষ্ট সড়কের ১ হাজার ৫০০ মিটার কাজটির মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা। অথচ বছর অতিক্রম হলেও ৫০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কে ইট-বালু ফেলে রাখায় যান চলাচলে দুর্ভোগের পাশাপাশি ইট-বালুর ডাস্ট বাতাসে উড়ে বাসাবাড়িতে যাওয়ায় সড়ক–সংশ্লিষ্ট বসতিরা ভোগান্তিতে পড়েছে।

এলজিইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, সড়ক সংস্কারে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সকে লিখিতভাবে সতর্ক করেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন। ওই চিঠিতে এলজিইডি থেকে বলা হয়, আইএসজি কাজের রোলার না দিয়ে এএস কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়ক থেকে নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করে স্পেসিফিকেশন অনুসারে কাজের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে পি/এস বাজেয়াপ্ত ও চুক্তি বাতিলের কথাও বলে এলজিইডি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলজিইডির নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ বহাল রেখেছে।

কাজটির দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘সড়কের একটি অংশ নিয়ে জনৈক এক ব্যক্তি মামলা করেছেন এবং আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাই কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে, এটা ইচ্ছাকৃত নয়। কাজে অনিয়মের বিষয়টি আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা।’

পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মীর আলী হোসেন বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কাজটি বন্ধ রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে কাজটি শুরুর চেষ্টা করছি। কাজ নিয়ে অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। এটি হয়তো আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা।’

মামলার বাদী সৈয়দ মাকসুদুর রহমান বলেন, সড়কের নির্দিষ্ট একটি স্থান নিয়ে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু গোটা সড়কের কাজ বন্ধ করতে মামলা করা হয়নি। ঠিকাদার ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ বন্ধ রেখেছেন। ঠিকাদারের অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় ঠিকাদার সেলিম মিয়া বলেন, কাজটি তাঁর নয়, এটি আবুল কালাম আজাদ করছেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজটি তাঁর নয়, অন্য কেউ করছেন। কাজটির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি, ফাইল দেখে বলতে হবে কাজটি কে করছেন।’