‘বাজারোত শোগ জিনিসের দম বাড়িল, কিন্তু হামার দাম কমে’

সাইকেলে ডালি–কোদাল বেঁধে নিয়ে কাজের খোঁজে ছুটছেন এক দিনমজুর। গতকাল সকালে রংপুর শহরতলির কদমতলা এলাকায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুর নগরের নজিরের হাট এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। পঞ্চাশোর্ধ্ব শফিকুল প্রতিদিন সকালে সাইকেল নিয়ে বের হন কাজের সন্ধানে। তিনি মূলত দিনমজুর। কখনো বালু-ইট বহনের কাজ করেন, আবার কখনো মাটি কাটার কাজ করেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কেরানীপাড়া চারমাথার মোড়ে দেখা হয় শফিকুলের সঙ্গে। কাজের খোঁজেই তিনি রংপুর নগরের দিকে যাচ্ছিলেন।

আলাপে জানা গেল, বেশকিছু দিন ধরে নিয়মিত কাজ মিলছে না শফিকুলের। এদিকে বাজারে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘বাজারোত শোগ (সব) জিনিসের দম বাড়িল, কিন্তু হামার দাম কমে।’

শুধু শফিকুল নন, রংপুরের শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর একই ধরনের জবাব মিলল। গতকাল সকাল থেকে নগরের নজিরের হাট, নিসবেতগঞ্জ, ধাপ শিমুলবাগ, কেরানীপাড়া চারমাথার মোড়, বেতপট্টি, সাতমাথাসহ আরও কিছু এলাকা ঘুরে অন্তত ১০ জন দিনমজুরের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক।

শ্রমজীবী এসব মানুষের দাবি, শহরে বাসাবাড়িগুলোতে আর আগের মতো কাজ মিলছে না। এখন ভবন নির্মাণের কাজই বেশি হচ্ছে। তবে আগে যেমন বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হতো, এখন বাড়ির লোকজন এসব কাজ নিজেরাই করছেন। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ দৈনন্দিন খরচ কাটছাঁট করতে নিজেরাই অনেক কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তাঁরা। এতে শ্রমজীবীদের চাহিদাও কমে আসছে। পাশাপাশি মজুরিও আগের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

নগরের মাহিগঞ্জ বাজারে কাজের সন্ধানে এসেছেন পীরগাছার পারুল এলাকার বাসিন্দা আবদুস সোবহান। তিনি জমিতে নিড়ানির কাজ করেন। স্ত্রী, তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার। আয়রোজগারের বিষয়ের জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজরোত কোন জিনিসটার দাম বাড়ে নাই? জিনিসোত হাতে দেওয়া যায় না। হামরা সারাদিন খাটি মজুরি যে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা ছিল, সেই দাম কমি গেইছে। দরদাম করিয়া ৩৫০ টাকাত নামছে। সংসার চালার জন্যে উপায় না পায়া কম টাকাতে কাজোত যাওয়া লাগতোছে।’

শহরের বেতপট্টি এলাকায় শ্রম বেচাকেনা এলাকায় কথা হলো চারজন শ্রমজীবীর সঙ্গে। নগরের কুকরুল এলাকার বাসিন্দা দিজেন্দ্র মোহন্ত (৫৫) বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এগলা কষ্টের কথা কাকে কইমেন (বলবেন)! কায় শুনবে হামার গরিবের কষ্ট, জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে হামার জীবন চলে না। হামরা যে কেমন করি বাঁচি আছি, তা হামরাই ভালো জানি। হামার শ্রমের দাম বাড়ার কথা কইলে (বললে) কামে পাওয়া যাওয়া যায় না। দরদাম করিয়া দাম আগের থাকি আরও কমে দিছে।’

নগরের ঘাঘটপাড়া এলাকায় কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলে কৃষিশ্রমিক আফজাল হোসেন। তিনিও একই কথা জানালেন। সংসারে স্ত্রী, সন্তানসহ ছয়জনের সংসার। তিনি বলেন, ‘৫০০ টাকার হাজিরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা হইছে। তাও কাম পাওয়া যায় না। জিনিসের যে দাম বাড়ছে তাতে করি সংসার চালাইতে খুব কষ্ট হইছে।’