ডাক বিভাগের বিশেষ খামে তানোরের গরুর গাড়ি, মাটির বাড়ি

ডাক বিভাগের বিশেষ খামে রাজশাহীর তানোরের গরুর গাড়ি ও মাটির বাড়ির ছবি ঠাঁই পেয়েছে । রোববার রাজশাহীতে আয়োজিত ডাকবিভাগের প্রদর্শনীতে এই বিশেষ খাম প্রকাশ করা হয়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি ‘বরেন্দ্রপেক্স ২০২৪’ শীর্ষক একটি ডাকটিকিট প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। রাজশাহী নগরের কাজীহাটা এলাকায় নানকিং দরবার হলে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে রোববার। এ প্রদর্শনী উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি বিশেষ খাম প্রকাশ করেছে, যেখানে উঠে এসেছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার গরুর গাড়ি। এ বিশেষ খামের সিলমোহরটিতে লেখা রয়েছে প্রদর্শনীর নাম, আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম, জিপিও রাজশাহী ও তারিখ।
প্রদর্শনী দেখতে আসা অনেকে এই বিশেষ খাম দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। গ্রামে যাঁদের শৈশব-কৈশোর কেটেছে, তাঁরা এই খামের গরুর গাড়িটির প্রতি স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ করছেন।

এই ছবির চিত্রকর সুমন্ত কুমার। আজ থেকে ১০ বছর আগে কোনো একদিন তিনি তানোরের এক গ্রামে একটি মাটির বাড়ির পাশে বসেছিলেন তাঁর তুলিতে উঠে আসে গ্রামের গরুর গাড়ি, পেছনের মাটির বাড়ি ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। খালি গাড়িটি বাড়ির আঙিনায় রেখে দেওয়া হয়েছে। গাড়ির কাছে খাবার খুঁটে খাওয়া কয়েকটি মুরগিও বাদ যায়নি। সবই এই বিশেষ খামের মাধ্যমে ধরে রাখা হয়েছে।

খামটির নকশাকার সুমন্ত কুমার রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজাইনার। অনুষ্ঠানস্থলে পাওয়া যায় তাঁকে। এই গরুর গাড়ির নকশা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তানোরের গ্রামে একটি কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে মাটির বাড়ির সামনে একটি গরুর গাড়ি রাখা ছিল। গাড়ির সামনে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। বসে থাকতে থাকতেই ছবিটি এঁকেছিলেন। কিন্তু এত বছর পরে শিল্পী আর কিছুতেই গ্রামের নামটি মনে করতে পারলেন না। তবে বললেন, তাঁর নানার বাড়ি গ্রামে। গ্রামটি ঘিরে তাঁর শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এ গ্রামের গরুর গাড়ির ছবিটি দিয়ে খামের ডিজাইন করে আসলে তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের একটি গ্রামীণ জনপদকে ধরে রাখতে চেয়েছেন।

মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের যুগে ব্যক্তিগত চিঠি পাঠানো যখন প্রায় থেমেই গেছে, তখন রোববার রাজশাহীতে দুষ্প্রাপ্য ডাকটিকিটের এই প্রদর্শনীতে ডাকটিকিট বিক্রি আর চিঠি বুঝে নিতে খুবই ব্যস্ততা দেখা গেল ডাকবিভাগের কর্মীদের।

এখানে দুষ্প্রাপ্য ডাকটিকিট যেমন প্রদর্শন করা হচ্ছে, তেমনি তা কেনারও সুযোগ রয়েছে। আর প্রদর্শনীর স্থান থেকেই রয়েছে চিঠি পোস্ট করার সুযোগ। এ জন্য ডাক বিভাগ একটি অস্থায়ী পোস্ট অফিস করেছে। অস্থায়ী পোস্ট অফিসেই একটি ডাকবাক্স রাখা হয়েছে। বরেন্দ্রপেক্স খামে ৫ টাকার ডাকটিকিট দিয়ে সেখানে চিঠি পোস্ট করছিলেন অনেকে। এ ছাড়া ৮ টাকার ডাকটিকিটে রেজিস্ট্রি করে এবং দ্রুত চিঠি পৌঁছাতে ১০ টাকার ডাকটিকিট দিয়ে জিইপি চিঠি পাঠাচ্ছিলেন অনেকে। বিকেল পাঁচটায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সারা দিনে প্রদর্শনীস্থলের অস্থায়ী ডাক বিভাগ থেকে প্রায় দেড় হাজার খাম বিক্রি হয়েছে।

এই প্রদর্শনীতে সারা দেশের বাছাই করা ২৫ জন ডাকটিকিটের সংগ্রাহক তাঁদের সংগ্রহ প্রদর্শন করছেন। পাশাপাশি তাঁরা ডাকটিকিট বিক্রিও করছেন। প্রদর্শনীতে পাকিস্তান আমল থেকে বর্তমান সময়ের সব ডাকটিকিটই রয়েছে। বিশ্বের নানা দেশের দুষ্প্রাপ্য সব ডাকটিকিটও প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে প্রদর্শন করা হচ্ছে অনেক পুরোনো চিঠির খামও। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘুরে ঘুরে এসব দেখছে। প্রিয়জনের কাছে চিঠি লিখছে।

ঢাকার উত্তরা থেকে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ডাকটিকিটের সংগ্রাহক কাজী মাহবুবুর রহমান। স্বাধীনতার আগেও বাংলাদেশকে নিয়ে যে আটটি ডাকটিকিট ছাপানো হয়েছিল, তার সংগ্রহ রয়েছে মাহবুবুর রহমানের কাছে। ওই ডাকটিকিটগুলো ছাপানো হয়েছিল রুপির হিসাবে। ১০ পয়সা, ২০ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ রুপি, ২ রুপি, ৩ রুপি, ৫ রুপি ও ১০ রুপির ডাকটিকিটগুলোর কোনটিতে কোন বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা তিনি বর্ণনা করে জানাচ্ছেন।

ডাকটিকিট নিয়ে বসেছেন সাতক্ষীরার আহসান-আল-আমিন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট বের করে দেখালেন। এটি ২০ পয়সার। ডাকটিকিটের ওপরে উড়ছে ছয়টি পায়রা। ডাক বিভাগের অস্থায়ী পোস্ট অফিসে বর্তমান সময়ে প্রচলিত ডাকটিকিটগুলো প্রদর্শন করছে। সেখানে ডাকটিকিট বিক্রিও করা হচ্ছে।

বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে আজ সবাই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি পাঠাচ্ছেন। যাঁরা চিঠি পাঠাচ্ছেন, এ অনুভূতিটা শুধু তাঁরাই বুঝতে পারছেন। আমরা আশা করছি, আজ যাঁরা চিঠি পাঠাচ্ছেন, তাঁদের একটা অভ্যাস তৈরি হবে।’