কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত বিদ্যালয়টি

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যালয়টির চালা উড়ে গেছে। ভেঙে গেছে চারদিকের টিনের বেড়া। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মেনহাজপুর হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যালয়টির চালা উড়ে গেছে। ভেঙে গেছে চারদিকের টিনের বেড়া। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মেনহাজপুর হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। শিক্ষক মিলনায়তনে, যেখানে প্রধান শিক্ষক বসেন, সেখানে এসএসসির শিক্ষার্থীরা ঠাসাঠাসি করে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের ভাঙা অবকাঠামোর একটি অংশে শিক্ষকেরা বসে আছেন। তবে অন্য কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমে নেই। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।

সেখানে আলাপকালে সহকারী শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ ভাঙা, কীভাবে পাঠদান করব বলেন? আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বড় কষ্টের মধ্যে আছি।’
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সামি বলে, তাদের বিদ্যালয়টি ঝড়ে একেবারে ভেঙে গেছে। শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। তাই তারা দুই দিন ধরে বিদ্যালয়ে গিয়ে আবার বাড়ি ফিরে এসেছে। তাদের চাওয়া দ্রুত বিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো যেন মেরামত করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার সাত-আটটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০ জন। মো. আবদুল আজিজ নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমাদের সাত-আটটি গ্রামের মধ্যে এই একটি মাত্র বিদ্যালয়। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের সবাই জেলে এবং খেটে খাওয়া মানুষ। আমাদের ছেলেমেয়েদের কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত যেন বিদ্যালয়টির ভাঙা ঘর মেরামত করে দেওয়া হয়।’

আরও পড়ুন
শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর মতো কোনো অবস্থা নেই। বারান্দায় বসে প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মেনহাজপুর হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন হিসেবে খ্যাত ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন এর অবকাঠামো, চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ ভেঙে যায়। শিক্ষার্থীরা বসে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেবে, সেই অবস্থা ছিল না। প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তায় তখন বিদ্যালয়টির জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০ জোড়া বেঞ্চ, ব্ল্যাক বোর্ড এবং চক-ডাস্টার দেওয়া হয়। এসব বেঞ্চ, ব্ল্যাক বোর্ড এত দিন বিদ্যালয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। এবার রিমালের আঘাতে সব সেসব ভেঙে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে স্থাপিত হয়। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী মো. মেনহাজ উদ্দিন সিকদার বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এ জন্য তিনি এক একর ১৬ শতক জমি ও অর্থ দান করেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এখন পর্যন্ত চারটি কলেজ, ১২টি স্কুল ও ২৫টি মাদ্রাসার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

মেনহাজপুর হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফউজ্জামান বলেন, ‘আমার মনে হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে উপজেলার মধ্যে আমাদের বিদ্যালয়টি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের দুরবস্থার কথা জানিয়ে পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। আমরা যাতে দ্রুত শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারি, সেই দাবি জানাচ্ছি।’

পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আসলে ঘূর্ণিঝড়ে পুরো জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলার ২১৮টি ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা পেয়েছেন। যোগাযোগব্যবস্থা ঠিক না হওয়ায় তাঁরা এখনো দুর্গত অনেক এলাকায় যেতে পারেননি। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরো চিত্র তাঁদের কাছে নেই। ক্ষতিগ্রস্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত অথবা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।