মায়ের গয়না বিক্রির টাকায় শুরু, এখন সফল মাছচাষি মিরসরাইয়ের অহিদুন নবী

অহিদুন নবী

অহিদুন নবীর (৩০) জীবনের গল্পটা হতে পারত আর দশজন যুবকের মতোই। পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে ছোটা। তারপর সে চাকরি করেই জীবন পার। কিন্তু গৎবাঁধা এমন পথে হাটতে চাননি স্বপ্নবাজ এই তরুণ। চাকরির পেছনে না ছুটে হতে চেয়েছেন উদ্যোক্তা।

সে চাওয়া থেকেই শুরু করেন মাছ চাষ। তবে শুরুটা সহজ ছিল না মোটেও। পুঁজি জোগাড় করতে মায়ের গয়না বিক্রির ঝুঁকিও নিতে হয়েছে তাঁকে। মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব ভগবতীপুর গ্রামের মাছচাষি অহিদুন নবী জানালেন তাঁর সংগ্রাম ও সফলতার গল্প।

অহিদুন নবী বলেন, ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে স্নাতক (দাউরা) পাশ করেন তিনি। ওই বছরই তাঁর বাবা মারা যান। মা, ছোট দুই বোন ও এক ভাইসহ ৫ সদস্যের পরিবার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে পুঁজির সংকট বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে ২০১৯ সালে মায়ের দুই ভরি গয়না বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ৩০ শতাংশ জায়গায় মাছ চাষ নামেন তিনি।

কিন্তু বছর না ঘুরতেই করোনার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন। তখন ধারদেনা করে কোনোরকম ব্যবসা চালিয়ে নেন অহিদুন। ২০২০ সালের শেষের দিকে লাভের মুখ দেখে তাঁর উদ্যোগ। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একে একে বাড়িতে বায়োফ্লক (পরিবেশবান্ধব উপায়) পদ্ধতিতে মাছ চাষ ও গরুর খামারে গড়ে তোলেন তিনি। গত চার বছরে পাঁচ একরের মাছের খামার ও ২৬টি গরুর খামার মিলে অহিদুনের ব্যবসার মূলধন এখন ৩০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় প্রায় এক লাখ টাকা।

পুরোটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় অহিদুনের এতদূর আসা। ইউটিউবের ভিডিও দেখে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো শিখেছেন বলে জানান তিনি। এ তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, ‘মনোবল আর মায়ের গয়না বিক্রির কিছু টাকা পুঁজি করে অনিশ্চিত পথে পা বাড়িয়েছিলাম। আমার বায়োফ্লক পদ্ধতির মাছ চাষ নিয়ে অন্য জেলার মৎস্য কর্মকর্তারা আগ্রহ দেখান। কিন্তু স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের কোনো সহযোগিতা পাইনি আমি।

খারাপ সময়ে অনেক কটুকথাও শুনেছি মানুষের। তবু হাল ছাড়িনি। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে হয়তো আরও দ্রুত ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারতাম। ব্যবসা আরও বড় করাই এখন আমার ধ্যানজ্ঞান।’

অহিদুন নবী

ব্যবসার আয়ে এরই মধ্যে অহিদুন বিয়ে দিয়েছেন তাঁর ছোট দুই বোনকে। তাদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে ছোট ভাই তাওহিদুল ইসলাম। আর মায়ের যে পরিমাণ গয়না বিক্রি করেছিলেন, সে পরিমাণ গয়না কিনে দিয়েছেন অনেক আগেই।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাছিম আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, জানা মতে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে কেউ সহযোগিতা চেয়ে পাননি, এমনটা সাধারণত হয় না। কোনো কারণে হয়তো অহিদুন নবীর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ বিভ্রাট হয়েছে। তাঁদের কাজই এমন তরুণ উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা। তিনি অহিদুনের কাজের বিষয়ে খোঁজ খবর নেবেন।