রাজশাহীতে এনসিপির কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ করায় বৈষম্যবিরোধী পাঁচ নেতাকে শোকজ
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ করায় জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার এই পাঁচ নেতাকে পৃথকভাবে নোটিশ পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া পাঁচ নেতা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন, মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক মিফতাহুল জান্নাত (বিভা), সুমাইয়া আক্তার, যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদুজ্জামান রাজ ও সদস্য সোয়াইব আহমেদ। তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশগুলো পৃথক হলেও একই বর্ণনা রয়েছে। নোটিশে নাম ও পরিচয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘গত ৩ ডিসেম্বর ও পরবর্তী কয়েক দিন ধরে আপনার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে একটি রাজনৈতিক দলের কমিটিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে, যা অত্যন্ত গুরুতর এবং একই সঙ্গে জনপরিসরে সংগঠনের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার ব্যাখ্যা এবং আপনার বিরুদ্ধে কেন স্থায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার লিখিত বিবরণ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দপ্তরের মারফত সভাপতি রিফাত রশিদ বরাবর উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আপনাকে সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন নোটিশপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা এনসিপির কমিটিতে আওয়ামী লীগের কোনো দোসরকে চাই না। জেলা কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দোসর। সংগঠন থেকে যদি আমাকে বহিষ্কারও করা হয়, তবু এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমি আমার অবস্থান থেকে সরব না।’
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট এনসিপির রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও রনিউর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরদিন যুগ্ম সদস্যসচিব জিহান মোবারক সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন। এরপর ১ ডিসেম্বর কমিটির আহ্বায়ককে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে আরও পাঁচ সদস্য কমিটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের কথা জানান।
সেদিন বিকেলে এনসিপির জেলা কমিটি নিজেদের পরিচিত সভায় সাংবাদিকদের ডাকেন। পর্যটন মোটেলে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে আহ্বায়কের পদত্যাগের দাবিতে বাইরে আরেকটি পক্ষ বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে এনসিপির জাতীয় যুবশক্তির মহানগরের দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের কক্ষে তালা মেরে আটকে রাখার হুমকি দেন। ওই ঘটনার পর সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে যুবশক্তির নেতা সোয়াইব ও মেহেদী হাসান দৌড়ে বাইরে চলে যান। সাংবাদিকেরাও তাঁদের পিছু নেন। পর্যটন মোটেল প্রাঙ্গণে বেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয়। পরে যুবশক্তির ওই দুই নেতা ক্ষমা চাইলেও তাঁদের সংগঠন থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পরে ৩ ডিসেম্বর রাতে কমিটি বাতিলের দাবিতে মহানগর এনসিপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মহানগর এনসিপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ আটজনকে তালা কেটে বের করা হয়। রাজশাহী মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মো. মোবাশ্বের আলী বলে আসছেন, জেলা কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগের দাবিটি যৌক্তিক।
তবে রাজশাহী জেলা এনসিপির কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, আওয়ামী লীগে তাঁর কোনো পদ ছিল না। কোনো পদ না থাকলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কারও সংশ্লিষ্টতা আছে বলে বলা যাবে না।