মাগুরায় বিএনপির সহস্রাধিক নেতা–কর্মীর নামে মামলা

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গতকাল শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনের নামে মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারাসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিদের অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মহম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জান্নাতুল বাদশা বাদী হয়ে আজ শনিবার সকালে ওই মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাঁদের মাঠ ছাড়া করতে পুলিশকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করে মামলার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বাজারের মধ্যে বিএনপির এক নেতার কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শুরু হয়। এরই মধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খান (উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক) ও উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আইনজীবী মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসে। এই মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া শুরু  হয়। তারপর তাঁরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করে।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপির নেতা–কর্মীদের হামলায় তাঁদের ছয়জন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি পিকাপ ভ্যান ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে শাহরিয়ার ও হোসেন সর্দার নামের দুজন এবং পরে অভিযান চালিয়ে শাহিন ও সৈকত নামের আরও দুজনকে আটক করা হয়। তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে বিএনপি নেতারার বলছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকেলে উপজেলা সদরের শামনগর এলাকায় একটি পেট্রোলপাম্পের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। সেখানে নেতা–কর্মীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পরে উপজেলা সদরের বাজারের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আক্তারুজ্জামানের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালনের পরামর্শ দেয় পুলিশ। তবে সেখানে কোনো স্লোগান না দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার কথা বলা হয়। পরে বিএনপির নেতা–কর্মীরা সেখানেই জড়ো হচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে বাজারের মধ্যে সমাবেশস্থলে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন নেতা–কর্মী স্লোগান শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ শোভাযাত্রার ব্যানার কেড়ে নেয়, কয়েকজনকে আটক করার পাশাপাশি নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা শুরু করে। তখন বিএনপি নেতা–কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আক্তারুজ্জামান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন নেতার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিথুন রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা–কর্মীদের মাঠ ছাড়া করতে এটা পরিকল্পিত ঘটনা। শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় প্রথমে পুলিশ বিনা কারণে বাধা সৃষ্টি করে, ব্যানার কেড়ে নেয়। ব্যানার ছাড়তে না চাইলে একাধিক নেতা–কর্মীকে পুলিশ বেধড়ক পেটায়, এমনকি সেখানেই একজনকে গুলি করা হয়। একই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এখন মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বাড়ি ছাড়া করা হয়।’

বিএনপি নেতাদের দাবি, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলায় অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. রতন মণ্ডল, ছাত্রদল নেতা নবিদুল ইসলাম, মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তারিক শিকদার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আওয়ামী নেতা–কর্মীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আক্তারুজ্জামানের রাজনৈতিক কার্যালয়, তাঁর মালিকানাধীন মহম্মদপুর প্রাইভেট ক্লিনিক এবং উপজেলা বিএনপির এক নেতার ভাইয়ের গবাদি পশুখাদ্যের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালান।  

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশের সময় ওই এলাকায় আমাদের কোনো নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন না। ভাঙচুরের সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নন।’