মেঘনায় নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪

গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে স্পিডবোট ও নৌকার সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের লাশ মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে পুলিশ। শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে স্পিডবোট ও কাঠের নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় নিখোঁজ মো. নাঈমের (২৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে সামান্য অদূরে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে একই ঘটনায় নিহত আরও তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁরা হলেন গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মামুন ব্যাপারীর ছেলে অদুদ ব্যাপারী (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চর ঝাপটা এলাকার বাচ্চু সরকারের ছেলে মো. বাবুল (৪৮) এবং একই উপজেলার আধারা ইউনিয়নের জাজিরা এলাকার আবুল হোসেন গাজীর ছেলে মাহমুদ গাজী (৩৫)।

প্রথম দিকে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানায় নৌ পুলিশ। পরে তদন্তে জানা যায়, একটি স্পিডবোট ও নৌপথে চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহৃত ছাউনিযুক্ত নৌকার মধ্যে সংঘর্ষটি ঘটেছে।

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, স্পিডবোট ও ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হলেও স্পিডবোটের চালক নাঈম নিখোঁজ ছিলেন। আজ বেলা আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলের কিছু দূর থেকে তাঁর লাশটিও উদ্ধার করা হয়েছে। নদীর মাঝখানে মাছ ধরার ফাঁদে লাশটি আটকে ছিল। এ ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলার ও স্পিডবোট উদ্ধারে অভিযান চলছে।

এর আগে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি রাতে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে মেঘনা নদী থেকে ডাকাত বাহিনী নয়ন ও পিয়াসের লোকজন খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করেন। বালু উত্তোলনের সময় তাঁরা নিজস্ব কয়েকটি স্পিডবোট ও ট্রলার দিয়ে মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে মহড়া দেন। দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোট ও ট্রলারটি বালুমহালের অবৈধ বালু উত্তোলনে মহড়ার কাজ করছিল। রাতে অন্ধকার ও কুয়াশার কারণে স্পিডবোট ও ট্রলার একটি অন্যটিকে দেখতে না পাওয়ার কারণে সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা সংঘর্ষের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান তাঁরা। দুর্ঘটনার পরপরই তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। একজন নিখোঁজ ছিলেন, যাঁর লাশ আজ উদ্ধার হলো। এ ছাড়া আবদুল হালীম (৩৪) নামের গুরুতর আহত একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়।

গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, দুর্ঘটনায় যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময় তাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রির কাজে সহযোগিতা করছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অদুদ ব্যাপারী গুয়াগাছিয়ার কুখ্যাত ডাকাত পিয়াসের আপন ভাই। অদুদের বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১০টি মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া নিহত মো. বাবুল পাঁচটি মামলার আসামি ছিলেন।

ওসি বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হতাহতের ঘটনায় নিহত মাহমুদ গাজীর পরিবার থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।