গাজীপুরে বাড়ির ছাদে ছাগলের খামার, স্বপ্ন দেখাচ্ছে মোর্শেদকে

শুরুতে তিনটি ছাগল কিনেছিলেন মোর্শেদ। বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা ৩৫। আছে মুরগি ও কবুতরের খামারও।

গাজীপুর মহানগরের পশ্চিম চাপুলিয়া এলাকায় মোর্শেদ খানের বাড়ির ছাদে ছাগলের খামার। গত রোববার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

বাড়ির ছাদে কৃষি। এটা এখন অনেকেই করছেন। কিন্তু বাড়ির ছাদে ছাগল পালন নতুনই বলা যেতে পারে। প্রায় দুই বছর ধরে বাড়ির ছাদে ছাগল পালন করে সফলতা পেয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতফেরত গাজীপুর মহানগরের এক যুবক। ছাগলের পাশাপাশি ছাদেই পালন করছেন মুরগি, কবুতর। সফলতার মুখ দেখতে পেয়ে এখন আরও বড় পরিকল্পনা করছেন তিনি।

ওই যুবকের নাম যুবক মোর্শেদ খান ওরফে সুজন (৩৫)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর পশ্চিম চাপুলিয়া এলাকার মোশাররফ হোসেন খানের ছেলে। মোর্শেদ জানান, বিদেশ থেকে ফেরার পর বাড়ি নির্মাণের কাজ এবং ভাইদের পেছনে খরচ করে একেবারে শূন্য হয়ে যান। নিরুপায় হয়ে স্থানীয় একটি বাজারে খাবারের হোটেল করেন। সেটিও ভালো চলেনি।

মোর্শেদ বলেন, ‘হতাশ হয়ে আবারও বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করি। কিন্তু হঠাৎ ইউটিউব দেখে বাড়ির ছাদে ছাগল পালনের বিষয়টি মাথায় আসে। পরিকল্পনামাফিক শুরুও করে দিই। তাতেই সফলতা পেতে শুরু করি। এখন আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা করছি।’

মোর্শেদের বাড়ি মহানগরীর চাপুলিয়া রেলগেট এলাকায়। সেখানে গিয়ে এই যুবকের নাম বললে অনেকেই তাঁকে চিনেননি। কিন্তু যখনই বলা হলো ছাদের ওপর ছাগল পালন করেন মোর্শেদ, তখন রেলগেটের পাশে দাঁড়িয়ে এক আমড়া বিক্রেতা এই প্রতিবেদককে বাড়িটি দেখিয়ে দিলেন। দোতলা বাড়ির প্রধান ফটকেই দেখা পাওয়া গেল মোর্শেদ খানকে।

তিনি নিজেই বাড়ির ছাদে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখা যায়, ঘরের মতো করেই আলাদা আলাদা কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে ছাগল রাখা হয়েছে। মাঝের একটি খোলা স্থানে ঘাসসহ অন্যান্য খাবার দিতেই সব ছাগল এক জায়গায় জড়ো হতে শুরু করে। খাবার খাওয়া শেষ হলেই ছাগলগুলো নিজে থেকেই চলে যাচ্ছে যার যার স্থানে।

বিদেশ থেকে যে অর্থ নিয়ে আসেন, তা দিয়ে চাপুলিয়া এলাকায় কেনা এক খণ্ড জমির ওপর দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করেন মোর্শেদ। ছাদেই টিনশেড করে খামার নির্মাণ করেন। পরে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকায় ভারতের হরিয়ানা জাতের সাত মাস বয়সী পুরুষ (পাঁঠা) বাচ্চা এবং ৯৬ হাজার টাকায় দুটি ছোট বাচ্চাসহ মাদি ছাগল ক্রয় করেন। বর্তমানে সাত লাখ টাকার ছাগলই আছে মোর্শেদের।

একে একে ছাগলের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে অর্ধশতাধিক পার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বেশ কিছু ছাগল বিক্রি করে দেন। এখনো তাঁর খামারে ছোট–বড় ৩৫টি বড় ছাগল রয়েছে। প্রতিটি ছাগল বছরে দুবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে দু-তিনটি করে বাচ্চা দেয়। তিনি বলেন, ছাগলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় দোতলা বাড়িটি তিনতলা করে খামার বাড়ানোর চিন্তা করছেন। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করেছেন।

ছাগলের পাশাপাশি কবুতর ও মুরগির খামার করেছেন একই ছাদে। বর্তমানে তাঁর ২০ জোড়া কবুতর এবং তিন শতাধিক দেশি মুরগিও রয়েছে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর একটি ইনকিউবেটরও রয়েছে। এর সহযোগিতায় প্রতিদিন তিনি মুরগির ডিম থেকে ৫০টি করে বাচ্চা ফোটান। পরে বিভিন্ন বয়সী মুরগির বাচ্চা বা মুরগি বিক্রি করে দেন।

ছাগল, মুরগি ও কবুতরের খাবারের জোগান দিতে ভবনের পাশেই জমিতে ঘাস চাষ করেছেন মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘কবুতর-মুরগিকেও আমার তৈরি অর্গানিক ফুড সরবরাহ করি। এতে ব্রয়লার মুরগির মতো মাংসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় না। ফলে এসব ছাগল-মুরগি-কবুতরের রোগবালাই নেই বললেই চলে।’