পঞ্চগড়ে শোভা ছড়াচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, দর্শনার্থীদের ভিড়

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবিটি শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো এলাকা থেকে তোলা
ছবি : রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সংলগ্ন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পাড়ে আজ শনিবার দুপুরে শত শত পর্যটকের ভিড়। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছিলেন তাঁরা।

কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলছিলেন ঢাকা থেকে আসা রেহানা বেগম ও মৌসুমী সিরাজ নামের দুজন। দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেরে এবং সেই দুর্লভ মুহূর্তের ছবি তুলতে পেরে অভিভূত তাঁরা। শুধু রেহানা ও মৌসুমী নন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকেরা ভিড় করেছেন দেশের সর্ব উত্তেরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্তঘেঁষা উপজেলা তেঁতুলিয়ায়।

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সংলগ্ন মহানন্দা নদীর পাড়ে দাঁড়ালে সবচেয়ে ভালো করে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যের আলো যখন শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে পড়ে, তখন ক্ষণে ক্ষে রং বদলে অপার্থিব সৌন্দর্য বিলায় এই শৃঙ্গ। হেমন্তের এই সময়টায় আকাশ পরিষ্কার থাকলে পঞ্চগড় জেলা শহর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শোভা দেখা যায়।

শরতের শেষের দিকে স্বল্প সময়ের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি মেরেছিল। তবে তেমন স্থায়ী হয়নি। হেমন্ত শুরুর পর আজ ভোর থেকেই স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। উত্তরের আকাশ মেঘমুক্ত থাকায়, সূর্যের আলোর সঙ্গে বদলে যাওয়া কাঞ্চনঝঙ্ঘার রূপ দর্শনার্থীরা দেখতে পাচ্ছেন। প্রতি বছরই অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নভেম্বরের প্রায় শেষ পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।

ভোরে সূর্যোদয়ের সময় তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সংলগ্ন মহানন্দার পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা বরফ কাঁচা সোনার রং ধারণ করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুভ্র রূপে ফিরে গেল। বিকেলে সূর্য যত পশ্চিমে হেলে পড়ছে, সোনালি আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা তত রং বদলাচ্ছে।

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সীমান্ত থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটারের মতো। দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে পর্যটকেরা যে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করেন, তা এখন পঞ্চগড়ের মাটিতে দাঁড়িয়েই দেখা যাচ্ছে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ারকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়ায় ভিড় করছেন পর্যটকেরা। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে এখানকার হোটেল-রেস্তোরা, আবাসিক হোটেলগুলো। পঞ্চগড় শহর ও তেঁতুলিয়া উপজেলা শহরের সরকারি গেস্টহাউসগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি আবাসিক হোটেলগুলোতে এখন পর্যটকের ভিড়।

ঢাকা থেকে আসা সামিরা নামে এক তরুণী বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তিন দিন আগে পরিবারের কয়েকজন মিলে তেঁতুলিয়ায় এসেছিলেন। দুদিন নিরাশ হয়েছেন। আজ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে তাঁরা অভিভূত। দেশের উত্তরের শেষ উপজেলায় এসে হালাকা শীতের অনুভূতির সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে ভ্রমণের ষোল কলা পূর্ণ হয়েছে তাঁদের।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড়ে আসা পর্যটকেরা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন বা বিপদে না পড়েন, সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন পর্যটকদের সুরক্ষায় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছে। জেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের কারণে স্থানীয় লোকজনও আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা পঞ্চগড়ের পর্যটনের জন্য একটি অন্যতম অনুষঙ্গ।