ভাসানচর থেকে পালাচ্ছিলেন, সন্দ্বীপে জনতার হাতে ধরা তিন রোহিঙ্গা
নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবির থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়েছেন তিন রোহিঙ্গা যুবক। আজ সোমবার সকালে উপজেলার গুপ্তছড়া সড়ক থেকে তাঁদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
আটক তিন রোহিঙ্গা যুবক হলেন মো. নুর মোহাম্মদ (৩০), মো. সিদ্দিক (২০) ও হোসাইন আহম্মেদ (২১)। তাঁরা সবাই ভাসানচর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। তাঁদের বাড়ি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাচিদংয়ের শিলখালি গ্রামে। আটকদের মধ্যে নুর মোহাম্মদ ও সিদ্দিক ভাই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, রাতে ভাসানচর থেকে চট্টগ্রাম নগরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই তিন রোহিঙ্গা যুবক সন্দ্বীপে পালিয়ে আসেন। ভোরে গুপ্তছড়া ঘাটে যাওয়ার পথে মালেক মুন্সীর বাজারে তাঁদের দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসার বিষয়টি স্বীকার করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মহিন উদ্দিন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসা টাকা তুলতে তাঁরা মালেক মুন্সীর বাজারে অবস্থান করছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় তাঁরা ভাসানচর থেকে পালিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশি সিম কীভাবে মুঠোফোনে ব্যবহার করছেন, তা তদন্ত করা উচিত।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ভাসানচরের কোস্টগার্ড কন্টিনজেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে আটক যুবকদের পুনরায় ভাসানচরে ফেরত পাঠানো হবে।
ভাসানচর কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাসানচরের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ঘিরে উপকূলীয় নিরাপত্তা ও পাহারা নিশ্চিতে আমরা নিরলস কাজ করছি। এরপরও কখনো কখনো কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়ছেন। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কোস্টগার্ডের তৎপরতা জোরদার করা হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাটার সময় সন্দ্বীপ ও ভাসানচরকে বিচ্ছিন্ন রাখা সরু চ্যানেলটি প্রায় শুকিয়ে যায়। এ সময় হাঁটু থেকে বুকসমান পানি পার হয়ে ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপে চলে আসেন রোহিঙ্গারা। মাছ ধরতে যাওয়া কিছু জেলে ও মাঝি তাঁদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করছেন। মাঝিরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়ও দিয়ে থাকেন বলেও জানান কয়েকজন বাসিন্দা।
সন্দ্বীপের নাগরিক অধিকার ইস্যুতে সোচ্চার থাকা মো. খাদেমুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, সন্দ্বীপে কিছুদিন পরপর জনতার হাতে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা আটক হচ্ছেন। ভাসানচর থেকে তাঁদের কারা নিয়ে আসেন, কারা তাঁদের আশ্রয় দিয়ে পার হতে সহায়তা দেন, তা এখন পর্যন্ত উদ্ঘাটন করতে পারেনি প্রশাসন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত রোহিঙ্গা পলায়নে সহায়তা দেওয়া চক্রকে খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করা।