খুলনায় প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, স্যালাইনের জন্য হাহাকার

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার প্রধান ওষুধ স্যালাইন নেই। রোগীকে বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে এনে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংকট বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় শিরায় দেওয়া অপরিহার্য (আইভি) স্যালাইনের। ইতিমধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা সব স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের কোনো স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে হাসপাতালের পাশাপাশি শিরায় দেওয়া স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতেও। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে রোগীর স্বজনদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। হাসপাতালের সামনের দোকানগুলোতে কোনো স্যালাইন নেই। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দাম দিয়ে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে তাঁদের।

চিকিৎসকেরা বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের জলীয় অংশ কমে যায়। এতে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমে যায়। রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়। একজন রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর বেশি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত দশমিক ৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন রোগীর শরীরে পুশ করতে হয়। চিকিৎসকেরা এটাকে ‘নরমাল স্যালাইন’ বলে থাকেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ দিন আগেই শিরায় দেওয়া সব স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীদের আর স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না। রোগীরা বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনছেন।

শয্যা না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দায় জায়গা হয়েছে গোলাম রহমানের (৫৫)। বারান্দার লোহার গ্রিলের সঙ্গে বাঁধা আধা লিটারের একটি স্যালাইন। তাঁর বাড়ি খুলনা নগরের খালিশপুর এলাকায়। গত শুক্রবার জ্বর হওয়ার পর পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রোববার সকালের দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

বুধবার দুপুরের দিকে কথা হলে গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তি হওয়ার পর এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে নাপা ট্যাবলেট ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয়নি। সেটিও মাঝেমধ্যে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সংকট তৈরি হয়েছে স্যালাইন নিয়ে। চিকিৎসকেরা স্যালাইনের কথা লিখে দিয়েছেন। প্রতিদিন দুটি করে স্যালাইন দিতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে তো কোনো স্যালাইন দেওয়াই হয়নি, বাইরের দোকানেও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের হেরাজ মার্কেট (ওষুধের মার্কেট) থেকে দ্বিগুণ দাম দিয়ে ওই আধা লিটারের স্যালাইন কিনে আনতে হয়েছে। স্যালাইন না থাকায় অল্প অল্প করে দিতে হচ্ছে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পিরোজপুরের নাজমুল হক। গতকাল দুপুরের দিকে অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধই দেওয়া হয়নি। সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। বাইরের দোকানগুলোতে স্যালাইন না পাওয়ায় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে স্যালাইন কিনতে হয়েছে, দামও পড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওই হাসপাতালে ১২২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২৮ জন। চলতি বছর ওই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন। গত ১৫ জুন আধা লিটারের (৫০০ এমএল) দেড় হাজার ব্যাগ স্যালাইন বরাদ্দ দেওয়া হয় ওই হাসপাতালের জন্য। স্যালাইন শেষ হওয়ার পর গত সপ্তাহে স্যালাইন পাওয়ার জন্য আবেদন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি এক লিটারের তিন হাজার ব্যাগ স্যালাইন এসেছিল এ হাসপাতালে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক চিকিৎসক নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত যে স্যালাইন প্রয়োজন, তা শেষ হয়ে গিয়েছিল। স্যালাইন পেতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। বুধবার তিন হাজার লিটার স্যালাইন পাওয়া গেছে। আশা করা যায়, আজ বৃহস্পতিবার থেকে স্যালাইনের সংকট থাকবে না।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রয়েছে দুই শতাধিক ওষুধের দোকান। কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শিরায় দেওয়া স্যালাইন পাওয়া যায়নি। দোকানদারেরা জানিয়েছেন, ওই স্যালাইনের সরবরাহ নেই।

জানতে চাইলে খুলনা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম কবির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশেই ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্যালাইনের সংকট রয়েছে। খুলনায় কিছুদিন ধরে সংকট চরম আকার ধারণ করছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও কোম্পানিগুলো স্যালাইন দিতে পারছে না। এখানে সিন্ডিকেটের কোনো ব্যাপার নেই। কোনো দোকানদার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন না।