২৫ মার্চের আগে মুজিব বাহিনী গণহত্যা করেছিল, দাবি চট্টগ্রাম জামায়াত আমিরের

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত যুব শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামছবি: জামায়াতের পাঠানো

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে মুজিব বাহিনী এলাকায় এলাকায় গণহত্যা চালিয়েছিল। এই গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নামিয়ে ক্র্যাকডাউন করে দিয়েছিল।

আজ মঙ্গলবার সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত যুব শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির এই দাবি করেন। নগরের ২ নম্বর গেট থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

চট্টগ্রাম নগর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুব বিভাগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ও নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মুজিব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত একটি মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের নিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়।

জামায়াত আমিরের বক্তব্য প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের এই দাবি শতকরা ১০০ ভাগ ভুয়া। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ এর জুন-জুলাইয়ের সময়। আর মুজিব বাহিনীর গণহত্যা চালানোর কোনো সুযোগ নেই। জামায়াত মুজিব বাহিনীর সদস্যদের আওয়ামী লীগ মনে করে এ ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু মুজিব বাহিনীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সদস্য পরবর্তী সময়ে জাসদ করতেন।

শোভাযাত্রায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ওয়াদা দিয়েছিল ইসলামের আলোকে, বৈষম্যহীন, ইনসাফপূর্ণ, গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করবে। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অবশেষে বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে।

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। পাকিস্তানি গোষ্ঠী গড়িমসি করতে করতে শেষ পর্যন্ত ২৫ মার্চে আমাদের যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে। কিন্তু সেই রাতের সঠিক ইতিহাস আমাদের জানানো হয়নি। আজকের দিনে ইতিহাসের কালো অধ্যায়গুলো উদ্ধার করতে হবে। মূলত ২৫ মার্চের আগে মুজিব বাহিনী এলাকায় এলাকায় গণহত্যা চালিয়েছিল। এই গণহত্যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ২৫ মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নামিয়ে ক্র্যাকডাউন করে দিয়েছিল।’

নগর জামায়াতের আমির দাবি করেন, ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করে শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় আরামে দিন কাটিয়েছেন। সেই ইতিহাস উদ্ধার করতে হবে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন নগর জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে আমাদের বিজয়ের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ঢাকাসহ প্রধান সড়কগুলো দখলে নেয়। এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনায় ১৪ ডিসেম্বর আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী বিজয়ের দিনে কোথায় ছিলেন? আত্মসমর্পণ দলিলে তাঁকে কেন স্বাক্ষর করতে দেওয়া হয়নি? আজ আমাদের এসব ইতিহাস জানতে হবে।’