‘ভ্যান চালাইয়া ভাইরে নিয়া হাসপাতাল রওনা দিলাম, বাঁচাইতাম পারলাম না’

জুড়ীতে ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া তরুণ ঈদুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

‘ভাইর শরীর রক্তে ভরা। রাস্তাত গাড়িটাড়ি কিচ্ছু নাই। একটা ভ্যান পাইলাম, ড্রাইভার নাই। আম্মু আর আমি ধরাধরি করি উঠাইলাম। ভ্যান চালাইয়া ভাইরে নিয়া হাসপাতাল রওনা দিলাম, বাঁচাইতাম পারলাম না।’

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ছুরিকাঘাতে নিহত তরুণ ঈদুল হাসান ওরফে আরমানের (২২) ছোট ভাই কামরান আহমদ (১৯)। মারা যাওয়া ঈদুল হাসান উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের গরেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সৌদি আরবপ্রবাসী সুমন মিয়ার বড় ছেলে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার রাতে ঈদুল হাসানকে ঘর থেকে বাইরে ডেকে নিয়ে যান প্রতিবেশী ইয়াজ মিয়ার ছেলে তানভীর হাসান (২২)। একপর্যায়ে তানভীর তাঁর ডান পাশের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় বাধা দিলে আরেক প্রতিবেশী ঈদুলের খালু অটোরিকশার চালক রফিক মিয়াকেও (৪০) ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে স্বজনেরা ভ্যানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে ঈদুল মারা যান। রফিক মিয়াকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ঈদুলের মা রহিমা আক্তার বাদী হয়ে আজ দুপুরে জুড়ী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ঈদুল হাসানকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার চারজন হলেন তানভীর হাসান, তানভীরের বাবা ইয়াজ মিয়া (৫৫), ভাই তুহিন আহমদ (১৯) ও চাচা তাজ মিয়ার (৫৫)। তাঁরা ঈদুল হাসান হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি।

আজ রোববার সকালে জুড়ী থানায় গিয়ে দেখা যায়, ময়নাতদন্তের জন্য ঈদুল হাসানের লাশ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ঈদুলের স্বজনেরা সেখানে ছুটে এসেছেন। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, দুই ভাই আর এক বোনের মধ্যে ঈদুল সবার বড় ছিলেন। নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

ছুরিকাঘাতে নিহত তরুণ ঈদুল হাসানের লাশ থানায় নিয়ে আসার পর সেখানে ছুটে যান স্বজনেরা। আজ মৌলভীবাজারের জুড়ী থানায়
ছবি: প্রথম আলো

ঈদুলের মা রহিমা আক্তার বিলাপ বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ভাত খাইয়া ছেলেটা খালি ঘুমাইল। তানভীর (ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার তরুণ তানভীর হাসান) তারে ডাকিয়া নিল। একটু পরে আইয়া কইল, আম্মু, আমারে বাঁচাও। দেখি, সারা শরীর রক্তে ভিজি গেছে। আমার জানের টুকরারে যারা কাড়ি নিছে, আমি তারার ফাঁসি চাই।’
স্বজনেরা দাবি করেন, ঈদুল হাসানের সঙ্গে তানভীর বা তাঁদের পরিবারের কারও কোনো বিরোধ ছিল না।

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মইন উদ্দিন আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঈদুল হাসান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হবে। আর্থিক লেনদেনের জের ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।