পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষককে ‘অপমান’ করার অভিযোগ সভাপতির বিরুদ্ধে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে। পরীক্ষার কক্ষে কোর্স শিক্ষককে অপমান করার অভিযোগ তুলে গতকাল রোববার দুপুরে সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত দিয়েছেন ওই বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনার তাৎপর্যপূর্ণ সমাধান না হলে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়েছেন কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন। তবে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শেখ কবির উদ্দিন হায়দার বলছেন, ক্লাস রুটিনের কারণে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে।

লিখিত অভিযোগ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুটিন অনুযায়ী গতকাল বেলা পৌনে দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের ১৫৬ নম্বর কক্ষে অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিবের ক্লাস নেওয়ার কথা ছিল। তবে শ্রেণি প্রতিনিধি তানজিমা জোহরার সঙ্গে সমন্বয় করে ওই কক্ষে ইনকোর্স পরীক্ষা নেওয়া যাবে বলে জানান অধ্যাপক এমাজ উদ্দীনকে। সে অনুযায়ী ইনকোর্স পরীক্ষা নিচ্ছিলেন এমাজ উদ্দিন। পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পর বিভাগের চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন হায়দার কক্ষে ঢুকে বসে পড়েন এবং ওই কক্ষে তাঁর ক্লাস আছে বলে জানান। এমনকি সেখানেই ক্লাস নেবেন বলে ইনকোর্স পরীক্ষার মাঝে বাধা সৃষ্টি করে পরীক্ষা বন্ধ করে দেন এবং কোর্স শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সামনে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।

শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, এমন ঘটনার জেরে অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আর কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না বলে জানিয়েছেন। করোনা মহামারির জন্য ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে আছেন। এ অবস্থায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তাঁদের জন্য অনেক হুমকিস্বরূপ।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবিও জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, কোর্স শিক্ষক এমাজ উদ্দিনকে অপমান করায় সভাপতিকে ক্ষমা চাইতে হবে অন্যথায় পদত্যাগ করতে হবে। অনতিবিলম্বে ক্লাস-পরীক্ষা চালু ও ওই ব্যাচের ৪১৪ কোর্স থেকে কবির উদ্দিন হায়দারের সব সম্পৃক্ততা বাতিল করে নতুন শিক্ষককে দায়িত্ব দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর ফলের ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আগপর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী ও বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সভাপতি কবির উদ্দিন হায়দার বিএনপিপন্থী এবং এমাজ উদ্দিন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। দুই শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন বলেন, একটা পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বিভাগের সভাপতি হয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ সমাধান চান। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তিনি কোনো ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা নেবেন না।

তবে সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি শেখ কবির উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘ক্লাস রুটিনের কারণে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। কে বা কারা কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ দিয়েছেন, আমি জানি না। তবে এ ব্যাপারে আমার ব্যাখ্যা দেওয়া ঠিক হবে না। বিষয়টিতে বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয় আছে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন।’

লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তা ব্যস্ত পাওয়া যায়।