সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে আবদুল জব্বার মোড় পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বেলা ১১টার দিকে আবদুল জব্বার মোড়সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করে ঢাকা থেকে আসা দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা জারির ঘোষণাটি শিক্ষার্থীদের সামনে আসে।
এক মাসের জন্য রায় স্থগিতের ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ট্রেন আটকে বেলা একটার দিকে রেলপথের ওপর সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ইরান মিয়া জানান, সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে শুধু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রেখে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে। এই দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কার্যক্রম চলবে। রায় স্থগিত করে শিক্ষার্থীদের ধোঁকা দেওয়া চলবে না। এই রায়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ঝুলে থাকতে চান না, সুস্পষ্ট রায় চান।
রেলপথ অবরোধের কর্মসূচিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি অবরোধ করে রাখা হবে। প্রতিদিন ট্রেন অবরোধ চলবে কি না, এটি এখনই বলা সম্ভব নয়। এটি সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে পরে সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে বেলা ১১টা থেকে ট্রেন অবরোধ করে রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ট্রেনের যাত্রী হামিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি জামালপুরে যাচ্ছি। মেয়ে মারা গেছে। নাতি-নাতনিদের কান্না কানে বাজছে। তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠলাম। এখন ট্রেনও বন্ধ। কীভাবে পৌঁছাব কিছুই বুঝতে পারছি না।’
হৃদ্রোগে আক্রান্ত রিকশাচালক মো. ফারুখ তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে জামালপুরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। ট্রেনে ভাড়া কম বলে ট্রেনে করে বাড়িতে যাচ্ছি। ট্রেন না ছাড়লে আলাদা খরচ করে বাড়ি যাওয়ার উপায় আমার নাই।’
তবে যাত্রীদের কথা ভেবে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রীদের ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছে দেওয়ার কাজেও সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।