টঙ্গীতে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ-ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৯ জন গ্রেপ্তার

গাজীপুরের টঙ্গীতে ট্রেনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানায়
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ছিনতাই ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে টঙ্গী রেলস্টেশনের আশপাশের এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ শুক্রবার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস।

আরও পড়ুন

ওসি ফেরদৌস আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় টঙ্গী রেলস্টেশনের আউটার সিগন্যালে (আকিজ বেকারসের পেছনে) চট্টগ্রাম থেকে আসা ঢাকাগামী ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ছিনতাই ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষকসহ (টিটিই) কয়েকজন যাত্রী আহত হন। হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় রেলস্টেশনের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে ও টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি চাইনিজ কুড়াল, দুটি চাকু ও ছিনতাই হওয়া কয়েকটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার মেহেদী হাসান জয় (২৬), আমতলী কেরানিরটেক এলাকার মো. রনি (৩৫), নরসিংদীর পলাশ থানার ঘোড়াশাল গ্রামের রবিউল হাসান (৪০), টঙ্গী পূর্ব থানার মরকুন পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. স্বাধীন (৩০), জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কলাফাতি গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২৫), বকশীগঞ্জের গলাবাধি গ্রামের মো. মাসুদ (২৭), টঙ্গী পূর্ব থানার নতুন বাজার এলাকার মো. নাসির (২০), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বলিয়াদী বাজার এলাকার মো. নয়ন হাসান (২৮) ও টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তির মো. আশিক (২২)।

টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ ছোটন শর্মা বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাতভর টঙ্গীর কেরানিরটেক বস্তি, তিস্তার গেট, ব্যাংকের মাঠ বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নয়জনকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ। আটকদের ঢাকার কমলাপুর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে তিনি জানান।

কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা জানান, ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশনে ঢোকার সময় গতি কমে যায়। ঠিক সেই সময় হঠাৎ ট্রেনে পাথর ছুড়তে থাকে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা আত্মরক্ষায় ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ ট্রেনের মেঝেতে শুয়ে পড়েন। এ সময় পাথরের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন। ট্রেনের এক টিটিইকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ও ছিনতাইয়ের ঘটনার ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের বেলা ট্রেনের একটি বগিতে যে যার জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। এর মধ্যেই হঠাৎ জানালা দিয়ে একের পর এক পাথর আসতে থাকে। মুহূর্তেই পুরো বগিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা দ্রুত জানালা বন্ধ করে দেন। পাথরের আঘাত থেকে বাঁচতে ট্রেনের মেঝেতে শুয়ে পড়েন যাত্রীদের কেউ কেউ।

ভিডিওটিতে একজন যাত্রী বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনটি টঙ্গী রেলস্টেশনে এসে থামে। প্রস্রাব করার জন্য এক যাত্রী বগি থেকে নামেন। এ সময় হঠাৎ পাশের জঙ্গল থেকে তিনজন বেরিয়ে এসে চাকু ধরে ট্রেন থেকে নামা যাত্রীর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীদের দিকে পাথর ছুড়তে থাকেন ছিনতাইকারীরা। ট্রেনের এক টিটিইকেও মারধর ও চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়। অনেকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পাথরের আঘাতে অনেকের মাথা ফেটে যায়।

ছুরিকাহত টিটিই গোপাল বলেন, ‘আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ পাথর ছোড়াছুড়ি দেখে দরজা বন্ধ করে দিই। পরে জানালার পাশ দিয়ে ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করা হয়।’ ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ট্রেনে হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে।