পাটগ্রামে সাড়ে ৪ বছরে সাত ইউএনওর বদলি, সেবা পেতে দুর্ভোগ মানুষের

লালমনিরহাট জেলার মানচিত্র

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় সাড়ে চার বছরে সাতজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বদলি হয়েছে। ঘন ঘন ইউএনও বদলি হওয়ায় প্রশাসনিক কাজে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এতে সরকারি সেবা পেতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের ধারণা, উপজেলায় নানামুখী চাপে ইউএনও এখানে থাকতে পাচ্ছেন না। ফলে বদলি হয়ে তাঁরা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন।

পাটগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র শমসের আলী বলেন, জেলা সদর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের পাটগ্রাম উপজেলা ভারতীয় সীমান্তঘেরা। তা ছাড়া এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এখানে রয়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারী ও পুলিশ অভিবাসন কেন্দ্র। দহগ্রাম ইউনিয়নের তিনবিঘা করিডর। এখানে আসেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত ও বিচারপতিরা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এখানে সব সময় ইউএনও থাকা জরুরি। না থাকলে তো সমস্যা হবেই।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে সাতজন ইউএনও বদলি হয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, একজন ইউএনও একটি উপজেলায় দুই বছর কর্মরত থাকেন। গত সাড়ে চার বছরে এ উপজেলায় কোনো ইউএনও দুই বছর থাকেননি। পাটগ্রাম উপজেলায় ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট ইউএনও হিসেবে আবদুল করিম যোগ দেন। এক বছরের মাথায় তিনি বদলি হয়ে চলে যান ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায়। এ সময় ৪ মাস ২৫ দিন ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর দায়িত্ব পালন করেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার দেব। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে বদলি হয়ে আসেন ইউএনও মশিউর রহমান। তিনি ৬ মাস ২৪ দিন দায়িত্বে থাকার পর বদলি হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনাহাট উপজেলায় চলে যান। এ সময় হাতীবান্ধার ইউএনও সামিউল আমিন পাটগ্রাম উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে একই বছরের ১৬ আগস্ট কামরুন নাহার ইউএনও হিসেবে যোগ দেন। তিনি ৬ মাস ২৭ দিন পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জামালপুরে বদলি হন। তখন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে উপজেলা সহকারী কমিশনার রুবেল রানা দায়িত্বে ছিলেন।

প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ মার্চ রামকৃষ্ণ বর্মণ ইউএনও হিসেবে পাটগ্রামে যোগ দেন। তিনি ১ মাস ১৯ দিনের মাথায় বদলি হয়ে চলে যান। ২০২১ সালের ৪ মে ইউএনও হিসেবে যোগ দেন সাইফুর রহমান। তিনি ১ বছর ১৫ দিনের মাথায় বদলি হয়ে ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নীলফামারী জেলায় যোগদান করেন। এরপর গাইবান্ধা জেলার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নাজির হোসেনকে পাটগ্রামে ইউএনও পদে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। পরে তিনি তদবির করে পাশের হাতীবান্ধা উপজেলায় যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর ইউএনও যোবায়ের হোসেনকে পাটগ্রামে যোগদানের আদেশ দেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তিনিও তদবির করে রাজশাহী বিভাগের পাবলিক সার্ভিস কমিশনে উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০২২ সালের ১৯ মে থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাটগ্রামের ইউএনও হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন হাতীবান্ধা উপজেলার ইউএনও নাজির হোসেন। পরে ইউএনও হিসেবে যোগ দেন নাজমুল হক। তিনি ৩ মাস ১৫ দিনের মাথায় বদলি নিয়ে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় চলে যান। বর্তমানে ইউএনও পদ শূন্য। তবে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন পাটগ্রাম উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার মাহমুদুল হাসান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে ইউএনওর পদ শূন্য থাকায় পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন কার্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষকে সরকারি সেবা পেতে নানা ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, পাটগ্রাম উপজেলায় ইউএনও নেই, এটি তিনি জানতেন না। তবে এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। পাটগ্রামে ইউএনও না থাকার বিষয়টি প্রতি মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে।