এলাকার যুবকেরা বৃদ্ধাকে বানিয়ে দিলেন নতুন ঘর
বছর তিনেক আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে গাছচাপা পড়ে অশীতিপর বৃদ্ধা হাজেরা বেগমের ঘরটি ভেঙে গিয়েছিল। পিতৃহীন এক নাতি ছাড়া এ জগৎ-সংসারে তাঁর আর কেউ নেই। সেই নাতিকে নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর রান্নাঘরে। সেখানেই দিন কাটছিল তাঁদের। মাস তিন আগে এক যুবক হাজেরা বেগমদের গ্রামে ইফতারি বিতরণ করতে গিয়ে তাঁর দুর্দশার চিত্র দেখতে পান। বিষয়টি তিনি তুলে ধরে হাজেরার ভাঙা ঘরের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর হাজেরার জন্য নতুন করে একটি ঘর নির্মাণ করতে চারদিক থেকে সাহায্য আসা শুরু করে। মাসখানেক আগে হাজেরাকে রঙিন টিনের একটি ঘর করে দিয়েছেন ওই যুবকেরা।
গত শুক্রবার সকালে পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হাজেরা বেগমের ভিটায় নতুন কাঠ আর রঙিন টিনের ঘর। নতুন ঘরে বসে তিনি দুপুরের রান্নার আয়োজন করছেন।
হাজেরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০ বছর আগে আমার স্বামী রায়হান উদ্দিন শেখ মারা গেছেন। কয়েক বছর আগে একমাত্র ছেলেও মারা গেছে। মৃত ছেলের সন্তান রুম্মানকে (১৮) নিয়ে স্বামীর পুরোনো ঘরে থাকতাম। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঝড়ে গাছচাপা পড়ে ঘরটি ভেঙে যায়। ঘরের পোতায় ঝুপড়িঘর তুলে রেখে আড়াই বছর প্রতিবেশী মনির খন্দকারের রান্নাঘরে থাকছি। এরপর এলাকার কিছু ছেলে আমাকে ঘর তুলে দেয়। ঘর পেয়ে আমি খুশি।’
হাজেরা বেগমের ভাঙা ঘর নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন কলাখালী ইউনিয়ন যুব স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সভাপতি মো. রানেল হাওলাদার নামের এক যুবক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত ১২ এপ্রিল ইফতারসামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে হাজেরা বেগমের ঘরটি দেখতে পাই। জরাজীর্ণ ঘরটি দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। এ সময় হাজেরা বেগমের ঘরের ছবি দিয়ে তাঁর দুর্দশার কথা তুলে ধরে ফেসবুকে পোস্ট দিই। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তি ও আমাদের সংগঠনের সদস্যদের সহায়তায় ৩২ হাজার টাকা সংগ্রহ করি। অলিউল্লাহ নামের এক ভাই কাঠ কিনে দেন। আমার বেতনের টাকা দিয়ে টিন কিনে ঘরটি নির্মাণ করে দিই।’
কলাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সেলিম শেখ বলেন, হাজেরা বেগম খুবই দরিদ্র। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘরের জন্য হাজেরা বেগমের নাম তালিকায় দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাজেরা ভূমিহীন না হওয়ায় এবং ওই ঘর শুধু ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ হওয়ায়, তাঁকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। স্থানীয় কিছু যুবকের উদ্যোগে হাজেরাকে নতুন ঘর করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের উদ্যোগটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।