রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদার জন্য সশস্ত্র মহড়া

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘সন্ত্রাসী’রা সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। অস্ত্র হাতে তাদের মহড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ২৬ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থেকে চাঁদার দাবিতে এই মহড়া দিয়েছে তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও উন্নয়নকাজের ঠিকাদারদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে দুর্বৃত্তরা। আগে তিন দফা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকাদারেরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৪৬ মিনিটে পুনরায় চাঁদার দাবিতে দুর্বৃত্তরা সশস্ত্র মহড়া দেয়। এ সময় ক্যাম্পাসে ঠিকাদারদের শেডে থাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২টি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও সশস্ত্র মহড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। সিসিটিভি ফুটেজে সময়ের উল্লেখ রয়েছে, ২৬ জুন রাত ১০টা ৪৬ মিনিট। তবে ঘটনাটি পৌনে নয়টার দিকে ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, সিসি ক্যামেরার সময় ঠিকমতো সেটিংস না করায় এই গরমিল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, সাতজন ব্যক্তি সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকছেন। তাঁদের চারজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। অস্ত্রধারীদের দেখে ক্যাম্পাসের মুখে চেয়ারে বসে থাকা একজন উঠে দাঁড়ান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নিরাপত্তা প্রহরী। ফটক পার হয়ে নিরাপত্তা প্রহরীর কক্ষে ঢুকতে দেখা যায় কয়েকজনকে। চার মিনিটের ভিডিওটির শেষ দিকে দেখা যায় ওই সাতজন আবার একই কায়দায় হেঁটে চলে যাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রশাসনিক ভবন ও একটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ২৬ কোটি টাকার এ কাজের যৌথ ঠিকাদার হচ্ছে এমই-আরবিজেবি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী মো. মীর হোসেন সশস্ত্র মহড়া ও চাঁদা দাবির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মীর হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ৮ টা ৪৬ মিনিটে কয়েকজন পাহাড়ি সন্ত্রাসী অস্ত্র হাতে ক্যাম্পাসে ঢুকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ সময় চাঁদা দাবি করেন তাঁরা। পরে শেডে থাকা শ্রমিকদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২টি মোবাইল নিয়ে তাঁরা চলে গেছেন। আমরা বিষয়টি নিরাপত্তা বাহিনীকে অবহিত করেছি।’ এর আগেও একাধিকবার দুর্বৃত্তরা চাঁদার দাবিতে হুমকি দিয়েছে বলে মীর হোসেন অভিযোগ করেন।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের মহড়া
ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া

জানতে চাইলে রাঙামাটির পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও ঘটনাটি জেনেছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। সশস্ত্র মহড়ার ভিডিও দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে তদন্ত শুরু করেছেন। ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। কারা, কেন মহড়া দিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কারা, কেন এই ঘটনায় জড়িত, এ বিষয়ে আপনারা একটা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারেন।’

২০১৪-১৫ সালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। সেমিপাকা অবকাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়। এরপর বর্তমানে সেখানে বিভিন্ন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি চলমান। প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতায় রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনতলা একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজটি হচ্ছে। দুটি ভবনের নির্মাণ ব্যয় আনুমানিক প্রায় ২৬ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। একটি ভবনের প্রতিটি মেঝের আয়তন প্রায় ১২ হাজার বর্গফুট। অন্যটির আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট।

ঠিকাদার সূত্রে জানা গেছে, কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বারবার চাঁদার দাবিতে হুমকি আসতে থাকে। এ নিয়ে দুর্বৃত্তরা চারবার ক্যাম্পাসে ঢুকে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এর আগে সবশেষ ১১ মে সশস্ত্র হুমকি দেওয়া হয়েছিল। প্রকৌশলী মীর হোসেন বলেন, ‘দিনের বেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরায় কাজ করে আসছিলাম। বৃহস্পতিবার রাতের হুমকির পর এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী সিদ্ধান্ত দেয়, তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

রাঙামাটিতে চারটি আঞ্চলিক সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এগুলো হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জেএসএস-এমএন লারমা, ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।