নারায়ণগঞ্জ শহর হয়ে গেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য: মেয়র আইভী

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার দশম বার্ষিকী স্মরণে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আয়োজনে শিশু সমাবেশ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শেখ রাসেল নগর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে
ছবি: প্রথম আলো

ওসমান পরিবারকে ইঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘পুরো শহর হয়ে গেছে ওসমানীয় সাম্রাজ্য। সেই সাম্রাজ্যের মধ্যে বসবাস করে আমরা ত্বকী মঞ্চের গুটিকয়েক মানুষ সব মানুষকে সম্পৃক্ত করে যেভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছি, আমার মনে হয়, আর বেশি দিন নেই, অত্যাচারী-জুলুমবাজদের মসনদ খুব তাড়াতাড়ি ধসে পড়বে।’

আজ সোমবার বিকেলে নগরের দেওভোগে জিমখানা শেখ রাসেল নগর পার্কের মুক্তমঞ্চে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১০ বছরপূর্তি উপলক্ষে শিশু সমাবেশ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন মেয়র আইভী।

নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, খেলাঘর আসর জেলা কমিটির উপদেষ্টা রথীন চক্রবর্তী। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ন্যাপ জেলার সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ প্রমুখ।

মেয়র আইভী বলেন, ‘আমরা ১০ বছর যাবৎ আমাদের সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে আসছি। আমরা জানি না আর কত দিন এই হত্যার বিচার চাইতে হবে। ত্বকীর ঘাতকগোষ্ঠীদের এই শহরের মানুষ সবাই চিনলেও কেন তাদের বিচার হবে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ একদিন ত্বকী হত্যার বিচার করবে। এই শহরের মানুষ জেগে উঠেছে। তারা প্রতিবাদ করতে শিখেছে, খুনিকে খুনি বলতে পারে। ত্বকী আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে, কীভাবে টিকে থাকতে হয় শিখিয়েছে।’

ত্বকী হত্যার বিচার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করে মেয়র আইভী বলেন, ‘আপনি অনেক হত্যার বিচার করেছেন। দয়া করে ত্বকী হত্যার বিচার করুন। আমরা জানি, সারা দেশের মানুষ জানে কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে।’

আইভী অভিযোগ করেন বলেন, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩ জেলা একই নিয়মে চললেও নারায়ণগঞ্জে চলে ওসমানীয় রাজত্ব। প্রশাসনকে যেভাবে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হয়, সেখাবেই কাজ হয়। এখানে প্রশাসনের লোকজন যাঁরা আসেন, তাঁরা কার হুকুম পালন করেন, সরকার নাকি স্থানীয় গডফাদারদের। শহরে যানজট ও হকার দিনের পর দিন বাড়ছে, শহরে একের পর ঘটনা বাড়ছে, সড়কে হকারদের হকার মেরে ফেলছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

মফিদুল হক বলেন, ‘শিশু রাসেলকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তাঁদের দুই বোন সংগ্রামের মাধ্যমে সেই হত্যার বিচার করেছেন। ত্বকী হত্যা ১০ বছরে দাঁড়িয়েছে, এই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ থামব না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি প্রবাহিত হবে। যেমনভাবে রাসেল হত্যার বিচারের দাবি প্রবাহিত হয়েছিল, ঠিক একইভাবে এই হত্যার বিচারের দাবি প্রবাহিত হচ্ছে।’

তদন্ত বিলম্বিত করে ওসমান পরিবারকে রক্ষা করা যাবে না উল্লেখ করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘এতে তাঁরা কিছু সময়ের জন্য রাজনৈতিক ফায়দা পেলেও ত্বকী হত্যার বিচার হতেই হবে। আমরা শুধু ত্বকী হত্যার বিচার চাই না, আমাদের এই নারায়ণগঞ্জকে শিশু ও মানুষের বাসযোগ্য নিরাপদ নগরী গড়ে তুলতে চাই। এই আন্দোলন থেকে আমরা কখনো পিছপা হব না।’

অনুষ্ঠান শেষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।