ছোট্ট শিশু নুসরাত জাহান (৯)। মায়ের কোলে বসে কিছুক্ষণ পরপরই কান্নায় মুষড়ে পড়ছে। মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মা নাসিমা আক্তার (২৯)। নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এখন বাবার মুখটি শেষবারের জন্য দেখতে চায় শিশু নুসরাত।
সৌদি আরবে একটি সোফা কারখানায় আগুন লেগে নুসরাতের বাবা মো. সাইফুল ইসলামসহ (৪১) ৯ বাংলাদেশি নিহত হন। গত শুক্রবার রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সাইফুলের স্বজনেরা জানান, সাভারের বলিয়ারপুরের সাতানিপাড়া এলাকার মৃত আলাউদ্দিনের সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার বড় সাইফুল ইসলাম। প্রায় ৯ বছর আগে তিনি সৌদি আরবে যান। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে চার বছর গাড়িচালক হিসেবে চাকরির পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে তিন বছর পিকআপ চালিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। এরপর ১৩ মাস আগে আবার সৌদি আরবে যান। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রাকচালক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। শুক্রবার ওই প্রতিষ্ঠানে ঘুমানোর সময় অগ্নিকাণ্ডে তিনি নিহত হন।
আজ রোববার দুপুরে সাভারের বলিয়ারপুরে সাইফুলের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি কক্ষে কাঁদছে নুসরাত। বাকরুদ্ধ সাইফুলের মা নবিজা বেগম (৬৫) চুপচাপ বসে আছেন। স্ত্রী নাসিমা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বিলাপ করছেন। উপস্থিত স্বজনদের অনেকেই নানাভাবে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ছেন কেউ কেউ।
শেষবারের মতো মুঠোফোনে শুক্রবার দুপুরে স্বামীর সঙ্গে কথা হয় নাসিমা আক্তারের। তিনি বলেন, ‘আমারে কল দিছিল শুক্রবার দুপুরে। বলছিল, “মাত্র খাইছি। খারাপ লাগতাছে, একটু ঘুমাব।” এরপর বিকেলে কল দিছি, ধরে নাই। মেসেজ দিছি, উত্তর দেয় নাই। রাইত দুইটার দিকে একজন কল দিয়া জানাইছে ঘটনা।’
আদরের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল সাইফুলের। মেয়েকে ভীষণ আদর করতেন বলে জানান নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জন্য পাগল ছিল ওর (নুসরাত) বাবা। এখন তো ওর কেউ রইল না। কে দেখব আমাদের? সাত লাখ টাকা ধার করে বিদেশে গেছিল। গত দুই মাস বেতন পায় নাই। তাই টাকাও পাঠায় নাই। এখন আমরা ধার শোধ করব কীভাবে? বাঁচব কীভাবে? আমাগো তো সব শেষ হইয়া গেল।’
বাকরুদ্ধ সাইফুলের মা নবিজা বেগম। দ্রুত সন্তানের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমি কিচ্ছু চাই না। আমার পোলারে আমার কাছে আইনা দাও।’
ভাইয়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না ইমরান হোসেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল সাইফুলের মেয়ে ও স্ত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তিনি। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন তিনি। ইমরান বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে সচ্ছল নই। আমরা তো আছিই ওর (সাইফুল) পরিবারের পাশে। এরপরও সরকার ওদের পাশে না দাঁড়ালে আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাব।’