রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা, নিধনে নজর কম

মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলায় মশারি টানিয়ে পড়াশোনা করছেন এক শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমীর আলী হলে
ছবি: প্রথম আলো

গরম আসার আগেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হল থেকে শ্রেণিকক্ষ কিংবা প্রশাসনিক ভবন—কোথাও স্বস্তি নেই। ক্যাম্পাসের ড্রেন ও ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সহজেই মশা বংশবিস্তার করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আলাদা বাজেট না থাকা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকটের কারণে মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করা যাচ্ছে না।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গার তুলনায় আবাসিক হলগুলোতে মশার উৎপাত বেশি। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, হলের ডাস্টবিন, পার্শ্ববর্তী ড্রেন ও আশপাশের ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে এসব জায়গায় মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়ে সহজেই বংশবিস্তার করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্যারিস রোড–সংলগ্ন যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, ওই সব ড্রেনে পানিসহ আবর্জনা জমে রয়েছে। ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের আবাসিক হলের আশপাশে ও নর্দমায় ঝোপঝাড় রয়েছে। সেগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে।

দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় ড্রেনে জমে আছে ময়লা–আবর্জনা। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সব্যসাচী সাহা বলেন, ড্রেন অপরিষ্কার রাখায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি সকালবেলা ক্লাসে প্রবেশ করলেও মশার উৎপাত লক্ষ করা যায়। জমে থাকা পানির ওপর প্রায় মশার লার্ভা দেখা যায়। মশাবাহিত রোগ নিধনে ক্যাম্পাসে নিয়মিত মশকনিধন অভিযান চালানো প্রয়োজন।

হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দা নুসরাত জাহান বলেন, দীর্ঘদিন নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় জনবলসংকট তৈরি হয়েছে। তাই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না।

এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান তবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের সর্বত্র মশকনিধনে কীটনাশক ছিটানো প্রয়োজন। অন্যথায় মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়বে। এতে শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম দেখভাল করে স্টুয়ার্ড শাখা। এই শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য জনবল খুবই নগণ্য। এ শাখার ৩৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১২ জন শ্রমিক ক্যাম্পাসের আবাসিক হল, শিক্ষকদের কোয়ার্টার, ড্রেন পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা ও ঘাস কাটাসহ নানা কাজ করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে অর্ধেক মাস্টাররুলে চাকরি করেন। পর্যাপ্তসংখ্যক জনবল না থাকায় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ ড্রেন ও আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন স্টুয়ার্ড শাখার অফিসপ্রধান সরদার মো. সোহরাব হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে কোনো নির্দিষ্ট বাজেট নেই। তবে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার উপকরণ ক্রয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যে বাজেট দেয়, সেই খাত থেকে কিছু অংশ মশা নিধনে ব্যবহার করা হয়। গত বছর মশা নিধনে দুটি ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে বাজেট ছিল ৯ লাখ টাকা। ১ লাখ টাকা কমে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট ছিল ৮ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বলেন, ‘রিডিংরুম, ডায়নিং ও হল কক্ষের কোথাও কয়েল জ্বালিয়ে রেহাই মিলছে না। টয়লেটগুলোতেও কয়েল নিয়ে যেতে হচ্ছে।’

সন্ধ্যা থেকে রাত, এমনকি দিনের বেলাও মশার কামড় থেকে নিস্তার মিলছে না বলে জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এ খাতে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, মশকনিধনের জন্য আলাদা কোনো বাজেট নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাত থেকে মশকনিধনের জন্য একটা অংশ নেওয়া হয়। মশা সৃষ্টির প্রজননস্থলগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গা ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ক্যাম্পাসে মশকনিধন অভিযান চালানো হয়েছে।