টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ, এখন যুক্তিতর্কের অপেক্ষা

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার এক যুগেও শেষ হয়নি। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন যুক্তিতর্কের অপেক্ষায় রয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় দেরি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে ও স্বজনেরা।

এ ক্ষোভ নিয়েই গতকাল শনিবার পারিবারিকভাবে পালিত হয়েছে ফারুক আহমেদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। গতকাল সকালে তাঁর কবরে পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে দুপুরে তাঁর কলেজপাড়ার বাড়িতে দোয়া ও দুস্থ মানুষদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।

ফারুক আহমেদের পরিবারের অভিযোগ, সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ এলেই কারাগারে থাকা কোনো আসামি ‘অসুস্থ’ হয়ে যান। বারবার পিছিয়ে গেছে হত্যা মামলাটির বিচারকাজ। মামলাটি এখন টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। দ্রুত মামলার বিচার নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন মজিদ মুঠোফোনে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে! বিচারের আশায় অপেক্ষা করতে করতে এই মামলার বাদী আমার মা গত বছর ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। মামলার আসামিরা প্রভাবশালী। তাঁরা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালে আনিছুল ইসলাম (রাজা) ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান (রানা), তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাঁকন) ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি ছানিয়াত খানের (বাপ্পা) জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান, তাঁর ৩ ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর মধ্য দিয়েই বিচারকাজ শুরু হয়।

আমানুর রহমান খান আত্মসর্মপণের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন। গত বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তাঁর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান এ হত্যা মামলায় জামিন পেলেও এখন অন্য মামলায় কারাগারে। অন্য দুই ভাই জাহিদুর ও ছানিয়াত এবং আসামি মোহাম্মদ কবির পলাতক। দুই আসামি আনিছুর রহমান (রাজা) ও মোহাম্মদ সমীর কারাগারে মারা গেছেন। জামিনে আছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাছির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ, ছানোয়ার হোসেন ও বাবু।

মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মনিরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, গত বছরের ১১ নভেম্বর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এই মামলার ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন মামলাটির যুক্তিতর্ক হবে। এরপরই রায় হবে।