যেভাবে ‘ফাউল কলেরা’র ভ্যাকসিন বানাল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরা রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের একদল গবেষক। এর শুরুটা হয়েছিল ১৯৮২ সালে, বর্তমানে যে ভ্যাকসিনটি আছে ২০২০ সাল থেকে এর আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি ভ্যাকসিনের সিড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করার ঘটনায় বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

১৯৮২ সালে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) অর্থায়নে ‘পোলট্রি বায়োলজিস ইউনিট’ প্রকল্পের আওতায় ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়। কাজটি শুরু করেছিলেন মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এ টি এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী। শিশুদের আমিষের চাহিদা পূরণে রোগমুক্ত হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি ছিল প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য।

এরপর ধারাবাহিকভাবে ভ্যাকসিনটির আধুনিকায়নের কাজ চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই বিভাগের গবেষকেরা। সর্বশেষ আধুনিকায়ন শেষে যে ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবিত হয়েছে, সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাউ ফাউল কলেরা ভ্যাকসিন’। এতে প্রধান গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন বিভাগের অধ্যাপক মো. বাহানুর রহমান।

ভ্যাকসিন গবেষণার বিষয়ে বাহানুর রহমান বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় তিন বছর ভ্যাকসিনটি তৈরির গবেষণা করা হয়। পরে বিভাগের লাইভস্টক অ্যান্ড অ্যান্ড পোলট্রি ভ্যাকসিন রিসার্চ অ্যান্ড প্রোডাকশন সেন্টারে এবং মাঠপর্যায়ে (ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইল ও নেত্রকোনা) ওই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে খামারিদের কাছে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়। সেই সময় থেকে ১ টাকায় ১টি ডোজ দেওয়া হয়। ইউনিসেফের অর্থায়নে গবেষণাটি শুরু হলেও পরে ভ্যাকসিন বিক্রির টাকা থেকেই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ ডোজ বিক্রি করা হতো।

অধ্যাপক বাহানুর রহমান বলেন, প্রতি দুই বছর পর পর ভ্যাকসিন গবেষণার প্রকল্পপ্রধান পরিবর্তন করা হয়। মূলত বিভাগীয় প্রধান যিনি থাকেন, তাঁকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিবারই ধাপে ধাপে ভ্যাকসিনটির আধুনিকায়ন করা হয়। ভ্যাকসিনের ক্ষতিকর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে সেগুলো দূর করে এটিকে আরও কার্যকর করা হয়। ভ্যাকসিনটি বিভিন্ন খামারের হাঁস-মুরগিতে প্রয়োগ করে প্রায় শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে। এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পন্ন করলে ফাউল কলেরার আর কোনো ঝুঁকি থাকে না।

এই ভ্যাকসিন সম্প্রসারণের কাজের জন্য ভ্যাকসিনের সিড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভ্যাকসিন বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য ভবনটির ৪, ৫ ও ৬ নম্বর তলায় সর্বাধুনিক গবেষণাগার নির্মাণ করা হবে।

হাঁস-মুরগির জন্য ভ্যাকসিনটি ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন বলে জানালেন ত্রিশালের ওজানপাড়ার খামারি আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘প্রায় আট বছর ধরে আমি লেয়ার মুরগির খামার করছি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৫ হাজার মুরগি আছে। দুই বছর আগে আমার আরেক খামারি বন্ধুর কাছে জানতে পারি যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বল্প মূল্যে মুরগির কলেরার ভ্যাকসিন নিতে পারব। সেখানে আমি ১ হাজার টাকায় ১ হাজার ডোজ পাই, যেখানে আগে অন্য কোম্পানিকে ১ হাজার ডোজের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হতো।’