টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশি

রোজা শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই শাড়ি তৈরি করে মজুত করা হয়। এবার হাফ সিল্ক, মিক্স কটন, পিওর সিল্ক ও সুতি শাড়ি তৈরি হয়েছে।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নে ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন পাইকারি শাড়ি কিনতে। এবারের ঈদ গরমকালে হওয়ায় তাঁতের শাড়ির চাহিদা ভালো। গত ২৮ মার্চের ছবি
প্রথম আলো

দেশজুড়ে প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। এবারের ঈদ গরমকালে হওয়ায় তাঁতের শাড়ির চাহিদা ভালো। টাঙ্গাইলের পাথরাইল ইউনিয়নে ঈদের বাজার জমে উঠেছে। সারা দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন পাইকারি শাড়ি কিনতে। তবে এবার মাঝারি দামের (দেড় থেকে ৫ হাজার টাকার) শাড়ির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

টাঙ্গাইল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়ন। জেলার বিভিন্ন স্থানে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হলেও এই ইউনিয়ন টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি ও ব্যবসার মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই তাঁরা শাড়ি তৈরি করে মজুত করেছেন। এবার হাফ সিল্ক, মিক্স কটন, পিওর সিল্ক ও সুতি শাড়ি বেশি তৈরি হয়েছে।

রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন পাইকারি শাড়ি কিনতে। রমজান মাসের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে পাইকারি বিক্রির চাপ অনেকটা কমে এসেছে। এখন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী দ্বিতীয় দফা শাড়ি নিতে আসছেন।

টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা তাঁদের এলাকায় বেশ ভালো। রোজার শুরুতে এক দফা শাড়ি নিয়েছিলেন। তাই আবার এসেছেন।
দীলিপ চক্রবর্তী, খুলনার ব্যবসায়ী

শাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, ৭০০-৮০০ থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা দামের শাড়ি ঈদ উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে। তবে মধ্যম দামের শাড়ির চাহিদা এবার বেশি। দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দামের শাড়িগুলো বেশি চলছে।

গত শুক্রবার পাথরাইল গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন তাঁতিবাড়িতে পাইকারি ক্রেতাদের উপস্থিতি। সীতানাথ বসাকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন পাইকার শাড়ি কিনছেন। খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আসা ঠাকুর বস্ত্রালয়ের দীলিপ চক্রবর্তী জানান, টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা তাঁদের এলাকায় বেশ ভালো। রোজার শুরুতে এক দফা শাড়ি নিয়েছিলেন। এবার আবার এসেছেন। এবার দেড় লাখ টাকার শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রামের মাসুম ক্লথ স্টোরের প্রতিনিধি মোবারক মিয়া জানান, এবার বেশি দামের শাড়ির চাহিদা কম। বেশি চলছে মধ্যম দামের শাড়ি।

রামকৃষ্ণ বসাকের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় যশোরের নোয়াপাড়া থেকে আসা শাড়ি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, সারা দেশে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা রয়েছে। এবারের ঈদ গরমের মধ্যে পড়েছে। সবাই আরামদায়ক কিছু খুঁজছেন পরিধানের জন্য। তাই বিভিন্ন দামের চার লক্ষাধিক টাকার শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সুবীর বসাক জানান, এবার তাঁতের শাড়ির চাহিদা ভালো থাকলেও বেশি উৎপাদন করতে পারেননি। শ্রমিকের অভাবে শাড়ি তৈরির কাজ ব্যাহত হয়েছে। তাই অন্যবারের তুলনায় এবার ৩০ ভাগ কম উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আনুষঙ্গিক জিনিসের দামও আরও বেড়েছে।

শাড়ি ব্যবসায়ী খোকন বসাক জানান, সব শ্রেণির ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই ঈদের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। তবে তাঁদের উৎপাদিত শাড়ির মধ্যে দেড়–দুই হাজার টাকা দামের শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে।

টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, পাথরাইল ইউনিয়নে চার শতাধিক সনাতনী তাঁত রয়েছে। এ ছাড়া চিত্তরঞ্জন তাঁতও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের তাঁত ছাড়াও অন্য এলাকা থেকেও শাড়ি তৈরি করিয়ে আনেন। এবার ঈদ সমনে রেখে পাথরাইলের ব্যবসায়ীরা চার থেকে সাড়ে চার লাখ শাড়ি তৈরি করেছেন।

সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক জানান, টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা রয়েছে কিন্তু তাঁতশ্রমিকের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। উৎপাদন করা গেলে এবার আরও বেশি শাড়ি বিক্রি করা যেত।