মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অপসারণ চেয়ে আওয়ামী লীগের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফের অপসারণের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মানববন্ধন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ রফিক সড়কে
ছবি: আব্দুল মোমিন

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসককে অপসারণ করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ‘সরকার, আওয়ামী লীগ, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কটূক্তি এবং দুর্নীতির’ অভিযোগে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইসরাফিল হোসেন।
মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুলতানুল আজম খান বলেন, জেলার উন্নয়নের রূপকার হচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। হাজার হাজার কোটি টাকার দৃশ্যমান উন্নয়নকাজ করেছেন তিনি। ইডিসিএল (রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জেলার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। তবে এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি অবিলম্বে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও পৌর মেয়র মো. রমজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব কুমার সাহা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরশেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী প্রমুখ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরের মেঘশিমুল এলাকায় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩১ দশমিক ৫ একর জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ইডিসিএলের পুরোনো প্ল্যান্ট মানিকগঞ্জে সরিয়ে নিতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, প্রস্তাবিত জমির শ্রেণি নাল হলেও অধিগ্রহণ বাবদ অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে সম্প্রতি বালু ভরাট করে ভিটি শ্রেণি করা হয়েছে। জেলার অন্য কোনো মৌজার রেট (দর) পরিবর্তন না করলেও শুধু মেঘশিমুল মৌজার ভিটি শ্রেণির সরকারি মূল্য প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ, আশপাশের মৌজার সমশ্রেণির জমির মৌজা রেট অনেক কম।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো পত্রে আরও বলা হয়েছে, মেঘশিমুল মৌজার প্রস্তাবিত জমির পরিবর্তে একই মৌজার অন্য কোনো জমিতে অথবা মেঘশিমুল মৌজার পাশের কোনো মৌজায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ সাশ্রয় হবে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত ওই চিঠি পাঠানো হয়। এরপর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ রফিক সড়কে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচির আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।