ভাঙা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

পৌর এলাকার ১৮০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১২২ কিলোমিটার পাকা সড়ক। দীর্ঘ সময় সংস্কার না হওয়ায় এর প্রায় অর্ধেক সড়কই বেহাল।

ভাঙাচোরা রাস্তায় বড় বড় গর্ত। গর্তে জমে আছে পানি। গতকাল বিকেলে দিনাজপুর শহরের পাহাড়পুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সড়কে বড় বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। নালার ময়লা পানি উপচে পড়ে সড়কে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। প্রায় এক যুগ ধরে দিনাজপুর পৌর শহরের বাসিন্দারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

মহারাজার মোড় এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হলে নাকে আসে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ। বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাটে কাদাপানিতে চলাচল করা মুশকিল। অন্য সময় শহরজুড়ে ধুলাবালু। চারদিকে সরকারের এত উন্নয়ন। কিন্তু দিনাজপুর শহরের রাস্তাঘাট দেখে মনে হয়, প্রাচীন পরিত্যক্ত শহরের বাসিন্দা আমরা।’

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দিনাজপুর পৌরসভা। ১৯৯০ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। বর্তমানে এ পৌরসভার আয়তন ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার। পৌর এলাকার ১৮০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১২২ কিলোমিটার পাকা সড়ক। দীর্ঘ সময় সংস্কার না হওয়ায় এর প্রায় অর্ধেক সড়কই বেহাল। এর ফলে তিন লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

শহর ঘুরে দেখা যায়, লিলির মোড় থেকে বাহাদুর বাজার স্টেশন গেট, ঘাষিপাড়া বটতলা মোড় থেকে ডাবগাছ মসজিদ হয়ে চাউলিয়াপট্টি-সাধুরঘাট, রামনগর-লালবাগ রোড, ষষ্ঠীতলা-সার্কিট হাউজ, মহারাজার মোড়-রাজবাটি মোড়, চারুবাবুর মোড়-ছয় রাস্তার মোড়, থানা মোড়-রেলবাজার সড়কে বড় বড় গর্ত। সম্প্রতি শহরের বাহাদুর বাজার থেকে লিলির মোড় এলাকার আধা কিলোমিটার রাস্তা এবং হাসপাতাল মোড় থেকে গোলকুঠি হয়ে মুন্সিপাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কের খানাখন্দে ইটের খোয়া ফেলেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

অটোচালক বাবুল হোসেন বলেন, ‘একে তো ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, তার উপুরত যানজট। কয় দিন আগোত যে গরমখান গেইল, তাতে দুর্ভোগের শেষ আছিল নাই।’

শহরের মির্জাপুর কলেজ মোড় থেকে রেলস্টেশনের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। ৩০ ফুট চওড়া এ সড়কের দুই পাশে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে ২২টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯টি ও তেলের পাম্প আছে ৩টি। আরও রয়েছে প্রেসক্লাব ভবন, শিল্পকলা একাডেমি, কোতোয়ালি থানা, রেস্তোরাঁ ও বিপণিবিতান। এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে নেই গাড়ি পার্কিং–সুবিধা। এর ফলে সড়কের ওপরে মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন অনেকে। যত্রতত্র যাত্রী তুলছেন ইজিবাইক চালকেরা। এ কারণে সড়কে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বাহাদুর বাজার থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা যেতে ১০ মিনিটের বদলে কখনো কখনো ৫০ মিনিট লাগে। শহরের কালীতলা এলাকায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টার আর ইজিবাইকের স্ট্যান্ড রয়েছে, এ কারণে যানজট হয়। এ ছাড়া শহরের সুইহারি এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ছিল। পরে তা মির্জাপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। টার্মিনালটি স্থানান্তরিত হলেও কালীতলা এলাকায় থেকে গেছে দূরপাল্লার বাসের ১৯টি কাউন্টার। সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আর বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই এলাকায় যানজট থাকে।

স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, পৌরসভার সড়কে যত্রতত্র ময়লার স্তূপ। ডাস্টবিন না থাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে বসতবাড়ি, হোটেল–রেস্তোরাঁ ও হাসপাতাল-ক্লিনিকের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার কারণে নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই নালার পানি রাস্তায় উপচে পড়ে। তার ওপর দিয়েই তাঁদের চলাচল করতে হয়। শহরের কালীতলা, বালুয়াডাঙ্গা, পুলহাট বিসিক, সুইহারি এলাকায় প্রায় সারা বছরই সড়কে ময়লা পানি জমে থাকে।

পৌরসভার পয়ঃপ্রণালি শাখার পরিদর্শক মো. নাঈম হোসেন বলেন, এই পৌরসভায় ময়লার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বনিম্ন ৩৫০টি ডাস্টবিন প্রয়োজন, সেখানে আছে ১১৫টি। উপায়ান্তর না দেখে মানুষ যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলছে। ময়লা পরিবহনে গাড়ি দরকার ১০টি, আছে ৬টি। তা–ও আবার বড় গাড়িটা দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। ভ্যান আছে মাত্র আটটি। এর ফলে আবর্জনা অপসারণ করতে সময় লাগছে।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিনাজপুর পৌরসভার উন্নয়নে বরাদ্দ অপ্রতুল। বর্তমানে নগর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১৫ কোটি টাকার কাজ চলছে। বিশ্বব্যাংক ও মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের ১০০ কোটি টাকার কাজ কয়েক মাসের মধ্যে শুরু হবে।