ভোলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫

ভোলার লালমোহন উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত দুই যু্বক। গতকাল রাতে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

ভোলার লালমোহন উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের হাজিরহাট বাজার এবং চরভূতা ইউনিয়নের হরিগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদর হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

লালমোহন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল হোসেন ওরফে রিমনের নেতৃত্বে ভোলা-৩ (তজুমদ্দিন-লালমোহন) আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওনের অনুসারী নেতা-কর্মী ও একই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য আবু নোমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল দুই পক্ষকে ডেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বলেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা আবুল হোসেনের নেতৃত্বে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রায়ই প্রতিদিন ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের হাজিরহাট বাজারে বিক্ষোভ করেন এবং বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। ওই এলাকা আওয়ামী লীগ নেতা আবু নোমানের বাড়ি। নোমান এবার ভোলা-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় আবু হোসেন পক্ষের লোকজন নোমান পক্ষের লোকজনকে সামনে পেলে চড়থাপ্পড় মারেন। কিন্তু এ নিয়ে এলাকায় তেমন কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাজিরহাট বাজারে যুবলীগ নেতা আবুল হোসেনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নোমানের অনুসারী নেতা-কর্মীরা বাজারের আলো বন্ধ করে তাঁদের ঘেরাও করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আবুল হোসেনের পক্ষের নেতা-কর্মীরা বাজার থেকে সরিয়ে দেন। পরে রাত নয়টার দিকে উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের হরিগঞ্জ বাজারে আবার দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

যুবলীগ নেতা আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন নৌকার পক্ষে শোভাযাত্রা করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখছি। গতকাল রাতে হাজিরহাট এলাকায় শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আবু নোমান হাওলাদারের সমর্থকেরা তাঁদের ওপর হামলা করে। হামলাকারীদের হাতে ইটপাটকেল ছাড়াও ধারালো অস্ত্র ছিল। নোমান বাহিনীর অতর্কিত হামলায় তাঁদের ১১ থেকে ১২ জন আহত হয়েছেন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’

আবুল হোসেন আরও বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে রাত ৯টার দিকে হাজিরহাট থেকে ফেরার পথে হোসেন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে (নোমানের অনুসারী মো. হোসেন হাওলাদার) হরিগঞ্জ বাজারে আবার হামলা হয়। এ সময় নোমান বাহিনী তাঁদের ১৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। নোমান বাহিনীতে সবাই বিএনপির সন্ত্রাসীরা যোগ দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

জানতে চাইলে মো. হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও তাঁর বাহিনীর অত্যাচারে লালমোহনের মানুষ অতিষ্ঠ। গতকাল সন্ধ্যায় হাজিরহাট বাজারে এবং রাতে হরিগঞ্জ বাজারে রিমন বাহিনী তাঁদের ওপর হামলা করে। পরে পাল্টা হামলা করে তাঁরা তাঁদের (আবুল হোসেন পক্ষের নেতা-কর্মীদের) অবরুদ্ধ করে রাখেন। পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে।

হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বর্তমান সংসদ সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আওয়ামী লীগে জায়গা করে নিয়েছে। এখন তারা দলের জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অত্যাচারে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতা-কর্মীসহ এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলাকায় মহড়া দিতে এলে এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিরোধ করেছে।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন আহত হয়েছেন। এক পক্ষের কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি।