১৭০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুলে শিক্ষার্থীদের প্রতি র্যাগিং ও বুলিং ঠেকাতে শ্রেণিকক্ষে আইপি ক্যামেরা বসানোর ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা, ক্লাস ফাঁকি ঠেকাতে প্রতি ঘণ্টায় হাজিরা খাতায় উপস্থিতি যাচাইসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন, কী প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফীর সঙ্গে।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের প্রতি র্যাগিং ও বুলিং শিক্ষকদের নজরে কীভাবে এল?
শ্যামপদ মুস্তফী: ১৭০ বছরের প্রাচীন এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দুই পালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল ও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ভাষাসৈনিক গাজিউল হক, স্থপতি আইনুন নিশাত, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের মতো কৃতীরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। এই বিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিদিন সকালে অ্যাসেম্বলি, পাঠদানের ফাঁকে নানা অনুপ্রেরণামূলক ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও বড় ক্লাসের শিক্ষার্থীরা ছোটদের ভয়ভীতি দেখায়, টাকা চায়, নানাভাবে বুলিং ও র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটায়—অভিভাবকদের এমন অভিযোগ। মারামারি, স্কুলের নানা জিনিস ভেঙে ফেলার ঘটনা তো প্রায়ই ঘটে। এসব ঘটনা জানলে শিক্ষার্থীদের নোটিশ দেওয়া হয়, সতর্ক করা হয়। কিন্তু কিছুতেই তাদের এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন: বুলিং ও র্যাগিং ঠেকাতে শ্রেণিকক্ষে আইপি ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন হলো কেন?
শ্যামপদ মুস্তফী: প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থী ১০ থেকে ১২টি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে এখন আইপি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে দুটি করে আইপি ক্যামেরা লাগবে, যাতে কেউ একটা ভাঙলে অন্য ক্যামেরায় জড়িত শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা যায়।
প্রশ্ন: জড়িত শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করার পর কী করবেন?
শ্যামপদ মুস্তফী: এই বিদ্যালয়ে অপেক্ষাকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ভর্তি হয়, আবার এই মেধাবী কিশোরেরাই অতি দুরন্ত হয়ে ওঠে। বুলিং ও র্যাগিংয়ে জড়িত শিক্ষার্থীদের সংশোধনের জন্য আমরা নানাভাবে কাউন্সেলিং করছি। তবু বন্ধ হচ্ছে না। এ কারণে জড়িত শিক্ষার্থীদের শনাক্তের পর সন্তানদের সংশোধনে ব্যবস্থা নিতে অভিভাবকদের কাছে নোটিশ পাঠানো হবে। পরপর তিনটি সতর্কতামূলক নোটিশের পরও সংশোধন না হলে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হবে।
প্রশ্ন: আইপি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে?
শ্যামপদ মুস্তফী: আইপি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান শিক্ষকের হাতে। তবে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিও এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। শ্রেণিভিত্তিক আইপি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন অভিভাবকেরাও।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের ব্যাগ তল্লাশি করে নাকি সিগারেট ও চাকু মিলেছে?
শ্যামপদ মুস্তফী: কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে শ্রেণিশিক্ষক অনেক সময় ব্যাগ তল্লাশি করেন। দু–একজনের ব্যাগে চাকু ও সিগারেট পাওয়া গেছে বলে জেনেছি। এ জন্য ক্লাসে ক্লাসে সতর্কতামূলক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ক্লাস চলার সময় কিছু শিক্ষার্থী প্রাচীর টপকে পেছনের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বসে সিগারেট টানছে, মাদকসেবীদের সঙ্গে মিশছে বলে অভিযোগ আসছে। এসব বন্ধে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা এবং প্রতি ঘণ্টায় হাজিরা খাতায় উপস্থিতি যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন: শিক্ষার্থীদের বখে যাওয়া ঠেকাতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী করছে?
শ্যামপদ মুস্তফী: শিক্ষার্থীদের বখাটেপনা ও দুরন্তপনা ঠেকাতে শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়মিত কাউন্সেলিং চলছে।
শিক্ষার্থীদের শোধরানোর জন্য অভিভাবকদেরও সহযোগিতা দরকার। সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় জোর দিতে পরিবারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।