শরীয়তপুরে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ভূমি কর্মকর্তাকে বদলি

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে বসে দুই সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ নেওয়ার দৃশ্যের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।

এ ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার মতিউর রহমানকে অন্য একটি উপজেলায় বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। এরপরই তাঁকে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন কোন পরিপ্রেক্ষিতে অফিসে বসে টাকা নিয়েছেন, তা তদন্ত করা হবে।’

ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একজন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, একজন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও দুজন অফিস সহায়ক কর্মরত। এ কার্যালয়ে ভূমির বিভিন্ন ধরনের সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাকা ছাড়া কোনো সেবা দেওয়া হয় না, এমন অভিযোগ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। অভিযুক্ত মতিউর রহমান এ কার্যালয়ে তিন বছর ধরে কর্মরত ছিলেন।

বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান অফিস কক্ষে বসে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছেন, এমন দৃশ্যের দুটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়েছে।

১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি প্রথমে মতিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। টাকা হাতে নিয়ে তা ড্রয়ারে রাখছেন মতিউর রহমান। এরপর ওই ব্যক্তির হাতে কিছু কাগজ তুলে দিলে তিনি ভূমি অফিস ত্যাগ করেন।

৪ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মতিউর রহমান তাঁর কক্ষে একটি চেয়ারে বসে আছেন। পাশ থেকে একজন ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডেল (বেশ কয়েকটি নোট) তাঁর কাছে দিচ্ছেন। দ্রুত টেবিল থেকে ওই টাকাগুলো সরিয়ে নিচে ড্রয়ার–জাতীয় কিছুতে রাখেন মতিউর রহমান। এরপরই তাঁর চেয়ারের পেছন দিয়ে ওই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক শিপা আক্তারকে বের হতে দেখা যায়।

দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার বড়কান্দি ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নে বদলি করা হয়েছে। আর শিধলকুড়া ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিযুক্ত করা হয়েছে।

জাজিরার পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের এক কৃষকের পারিবারিক কৃষিজমি রয়েছে বড়কান্দি ইউনিয়নের একটি মৌজায়। ওই কৃষকের বাবা তাঁকে ৩৬ শতক জমি দলিল করে দিয়েছেন। সম্প্রতি ওই জমি নামজারির জন্য মতিউর রহমানের কাছে গেলে তিনি টাকা দাবি করেন। পরে ওই কৃষক তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দেন। অনলাইনে নামজারির আবেদন করার পর আবার তাঁকে টাকা দিতে হবে, এমন চুক্তি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কৃষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একটি জমি নামজারির জন্য গেলে মতিউর রহমান ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দিলে অনলাইনে আবেদন করা যাবে না, এমন কথা বললে আমি তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দিই। পরবর্তী সময়ে আরও টাকা দেওয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি আমার কাগজপত্র রাখেন। দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে এখনো তিনি আমার কাজ করে দিচ্ছেন না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিই না।’ টাকা নেওয়ার দৃশ্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার অফিসের এক অফিস সহায়ক টাকা ধার নিয়েছিলেন, তা ফেরত দিয়েছেন। সেটাই ভিডিও করা হয়েছে। এর বাইরের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহায়ক শিপা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভূমি কর্মকর্তা স্যারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে তা পরিশোধ করেছিলাম। তবে ভিডিওতে যে টাকা লেনদেন দেখা গেছে, তা ওই ধারের টাকা নয়।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, বড়কান্দি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মতিউর রহমান তিন বছরের বেশি সময় সেখানে কাজ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করার পর অভিযোগের সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।