চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পুলিশের ওপর হামলা করে যুবলীগের এক কর্মীকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হকসহ ৪৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় পুলিশের বন্দর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে আনোয়ারা থানায় এই মামলা করেন। মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যুবলীগকর্মী মোজাম্মেল হককেও আসামি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মুহাম্মদ আরিফ হোসেন মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আনোয়ারা সেন্টার এলাকায় বাজেটকে স্বাগত জানানোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় মামলা হয়। মামলার আসামিদের ধরতে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানা-পুলিশ গতকাল শনিবার রাতে যৌথভাবে অভিযান শুরু করে। সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করতে রাত ১১টার পর আনোয়ারায় টানেলের প্রবেশমুখের ভোজনবাড়ি নামের একটি রেস্টুরেন্টের সামনে যায় পুলিশ। সেখানে আগে থেকে মোজাম্মেলসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী অবস্থান করছিলেন।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ মামলার আসামি মোজাম্মেলকে আটক করতে গেলে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। এ সময় রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বেরিয়ে আসেন। তিনিসহ নেতা-কর্মীরা মিলে আসামি মোজাম্মেলকে ছিনিয়ে নেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের ঘিরে ধরে গাছ দিয়ে আঘাত এবং এবং একপর্যায়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচ-ছয় রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। হামলায় আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ ও কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে ওসি জহিরের হাতে ও শরীরের কয়েকটি জায়গায় গুরুতর জখম হয়েছে।
নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমান্ডো স্টাইলে পুলিশ মোজাম্মেলকে ধরে ফেলে। তাঁকে ওভাবে না ধরে থানায় নিয়ে যেতে পারত। জিজ্ঞাসা করলে পুলিশ সদস্যরা গাছ দিয়ে আমাকেও আঘাত করেন।’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের তৃতীয় দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য। প্রথম দুবার তিনি ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংরক্ষিত আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানের এলাকাও আনোয়ারা-কর্ণফুলী। তিনি এবার অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। সম্প্রতি এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্য বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।