ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে ভোট চাইলেন বিএনপির নেতা

আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান। গত বুধবার রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি; পাশাপাশি এই নির্বাচন বর্জনে জনগণকেও আহ্বান জানাচ্ছে দলটি। এসব পদক্ষেপ উপেক্ষা করে দলটির যাঁরা নির্বাচনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কঠোর অবস্থানে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে ভোট চেয়েছেন বিএনপির এক নেতা।

গত বুধবার রাতে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় বিএনপির নেতা ভোট চান। এ সময় মঞ্চে বসে ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অরুণাংশু দত্ত। তাঁর পক্ষে বিএনপি নেতার ভোট চাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিএনপির ওই নেতার নাম মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক এবং সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। ২০২২ সালে ইউপি নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আলাউদ্দিনকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

গত বুধবার রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় পালাগান আয়োজন করেন স্থানীয় লোকজন। পালাগান চলার সময় সেখানে উপস্থিত হন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী অরুণাংশু দত্ত। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান। পালাগানের মঞ্চে অরুণাংশু দত্তর পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু আমি একটা সংগঠন করি, আমার একটা দল আছে, আপনারা এটা জানেন। আপনারা বলতে পারেন, চেয়ারম্যান সাহেব, আপনি এই ভোটের ব্যাপারে কথা বলছেন কেন? আমি কথা বলছি এ কারণে, সদর উপজেলার এই পাশে রাজাগাঁও থেকে জগন্নাথপুর হয়ে শুকানপুকুরী পর্যন্ত শুধু বনি আমিন চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি সব ১৪-১৫টা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনারসের (অরুণাংশু দত্তের নির্বাচনী প্রতীক) পক্ষে ভোট করার জন্য একত্র হয়ে গেছি। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমরা কেন একত্র হলাম? আমরা চেয়ারম্যানরা চাইছি, একজন পরিচ্ছন্ন, ভালো মানুষ, বিপদে–আপদে যাঁকে কাজে লাগবে, সেই মানুষটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোন। এটা আপনাদের যেমন চাওয়া, তেমনি আমাদেরও চাওয়া।’

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘আমি এই ইউনিয়নে তিনবার নির্বাচন করেছি। এই ব্লকটাতে (ওয়ার্ডে) আমি আমার জন্য কোনো দিন ভোট চাইনি। শুধু স্কুল মাঠে ছোট একটা মিটিং করে দিই। আপনারাই আমার ভোটটা করে দেন। এই এলাকার মানুষগুলোর সঙ্গে আমার এমনই সম্পর্ক। আমি আপনাদের এইটুকু কথা দিতে চাই, যেহেতু আমি এই ইউনিয়নে আপনাদের অভিভাবক, সুখে-দুঃখে আমি আপনাদের পাশে আছি, ছিলাম, থাকব।’

বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আপনারা আনারসের পক্ষে একটা করে ভোট আমাকে দেবেন। টিটোদার (অরুণাংশু দত্ত) কাছে কাজ থাকলে আমাকে বলবেন। আমি ওনাকে যতটুকু বলার বলব। যদি তিনি নির্বাচিত হতে না পারেন, আমাদের এই ইউনিয়নে যে ডেভেলপমেন্টের কাজগুলো আছে, তা অনেক ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের ইউনিয়নের কাজগুলো করতে হলে আপনারা আনারসে ভোট দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে মঞ্চে বসে থাকা অরুণাংশু দত্তর উদ্দেশে করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি দাদাকেও একটা কথা বলি, আমরা খুবই অবহেলিত। এখানে রাস্তাঘাট তেমন হয়নি। কী কারণে করেনি, তা আপনারা ভালো জানেন। আজকে সুযোগ আছে দাদা, যদি নির্বাচিত হন, তাহলে আমাদের যেসব টুকিটাকি রাস্তার কাজ আছে, তা করে দেবেন।’

উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আপনরা আমাকে কথা দিলেন তো ভোটটা দেবেন। দাদাকে ভোটটা আমার জন্য দেবেন। আপনারা ভোট দেবেন, দাদার কাছ থেকে যেটুকু কাজ করে নেওয়ার আমি তা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন ঘিরে একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ হতে যাচ্ছে। এই উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাদার (অরুণাংশু দত্ত) আনারসের পক্ষে নেমে পড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও আছি।’

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, এই সরকারের অধীন সব নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। পাশাপাশি ভোট বর্জনের আন্দোলন করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সেখানে মোস্তাফিজুর রহমান প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে ভোট চেয়ে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করেছেন। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হবে। কেন্দ্রই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনী কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।