মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হাতুড়িপেটা, দুই ছাত্রলীগ কর্মীসহ গ্রেপ্তার ৩

রাজশাহীতে হাতুড়িপেটার মামলায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাঁর বাবাকে হাতুড়িপেটার মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। তাঁরা রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিনের অনুসারী বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নগরের মতিহার থানাধীন মেহেরচণ্ডী পূর্বপাড়া এলাকার ইউসূফ খানের ছেলে ইরফান খান ওরফে মিরাজ (২৩), মৃত ইনতাজ আলীর ছেলে মো. ফরহাদ (২৭) ও ফরহাদের ভাই মো. আখের আলী (৩২)। এর মধ্যে ইরফান ও ফরহাদ ছাত্রলীগ কর্মী।

এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা নীল মাধব সাহা (৪৬) রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাঁর মেয়ে রাজশাহী মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। কলেজে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন এলাকার বখাটেরা। তাঁদের মধ্যে মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন মূল হোতা। ১২ আগস্ট সকালে এর প্রতিবাদ করেন তিনি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রুহুল আমিনসহ ৮ থেকে ১০ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে (পারলার) গিয়ে হামলা চালান। এ সময় তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয় এবং হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মাথায় ১২টি সেলাই পড়ে।

মামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

নীল মাধব সাহা বলেন, হামলার শিকার হয়ে তিনি চন্দ্রিমা থানায় যান। চন্দ্রিমা থানা প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলে। পরে চন্দ্রিমা থানা মতিহার থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। মতিহার থানায় মামলা করতে গেলে ওই থানার পুলিশ মামলা না নিয়ে জানায়, এলাকাটি পড়েছে রেলওয়ে থানার অধীন। তাই রেলওয়ে থানায় যান তিনি। সেখানেও মামলা নেওয়া হয়নি।

তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের পর সন্ধ্যায় রেলওয়ে থানা মামলা নিয়েছে। নীল মাধব সাহা মোট আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি রুহুল আমিনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কর্মকার বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা করেন নীল মাধব সাহা। শুরুতে মামলা না নেওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, গত ১৫ আগস্ট তিনি আহত অবস্থায় হাসপাতালের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যতীত এসেছিলেন। সেদিন তাঁকে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালের কাগজপত্র সঙ্গে আনার জন্য বলা হয়েছিল। মামলা নেওয়া হবে না এমনটা বলা হয়নি।

তিনজনকে আটকের পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে র‍্যাব-৫-এর পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় তাঁর বাবা নীল মাধব সাহাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে জখম করেন আসামিরা এবং তাঁর স্ত্রী বন্দনা রানী সাহাকে (৩৫) মারপিট করে অপদস্থ করেন।

র‍্যাব-৫ কোম্পানির ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারুফ হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটকে র‍্যাব অভিযান চালাচ্ছে। শিগগিরই তাঁদেরও আটক করা হবে।