টিনের ছাপরা, পলিথিনে ঘেরা স্থানে পাঠদান 

ফাঁকা মাঠের একটি স্থানে টিনের ছাপরা। চারপাশে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পলিথিন আটকানো। সেই স্থানে বেঞ্চে বসে আছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। সামনে দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক। 

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। শ্রেণিকক্ষের অভাবে টিনের ছাপরা আর পলিথিনে মোড়ানো স্থানে পাঠদান করা হচ্ছে।

১৯৯৩ সালে উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের চন্দননগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর মাটির তিন কক্ষের একটি ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চলত। ২০১৮ সালে সরকারি অনুদানে চার কক্ষের একতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। চার কক্ষের মধ্যে একটি প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৪ শিক্ষক-কর্মচারীর এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫০ জন। মাটির দেয়াল ও টিনের ছাপরার পুরোনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সেই ভবনের দুটি কক্ষ বর্তমানে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

৯ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে চন্দননগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরোনো ভবনের সামনে টিনের ছাপরা ও পলিথিনে মোড়ানো একটি স্থানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করেছেন। টিনের ছাপরা আর পলিথিনে ঘেরা সেই স্থানে বেঞ্চে বসে আছে কিছু শিক্ষার্থী। সামনে দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক। 

পুরোনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

জিজ্ঞেস করলে পাঠদানকারী সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতির স্বার্থে তীব্র শীতের মধ্যেই এই স্থানে পাঠদান করা হচ্ছে। ১ জানুয়ারি থেকে স্কুল শুরু হওয়ায় বিদ্যালয়ের অন্য শ্রেণিকক্ষগুলোতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে। আর কোনো কক্ষ না থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টিনের ছাপরা দিয়ে এই স্থানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করেছে। এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে ক্লাস চলবে। 

এসএসসি পরীক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন, সুলতানা পারভীন, আঞ্জুয়ারা খাতুনসহ ছয়-সাতজন বলে, ‘এখানে বসে ক্লাস করার প্রথম দুই-তিন দিন শুধু টিনের ছাপরা দেওয়া ছিল। কিন্তু কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হতো। তখন স্যারেরা পলিথিন দিয়ে চারদিক ঘিরে দিয়েছেন। আগের থেকে এখন একটু কম ঠান্ডা লাগে।’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসরাইল হক বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যালয়ে একতলা যে পাকা ভবনটি রয়েছে, সেটি তিনতলা ভিতবিশিষ্ট। নতুন ভবনের ওপর আর একতলা নির্মাণের জন্য ২০২১ সালেই মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ভবন নির্মাণের জন্য ঠিকাদারও নির্বাচন করা হয়েছিল। ভবন নির্মাণের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাকি কাজটি আর করতে চায়নি। নতুন করে বরাদ্দ হলে শুরু হবে ভবন নির্মাণের কাজ। বর্তমান একতলা ভবনটি দোতলা হলে শ্রেণিকক্ষের আর কোনো সংকট থাকবে না।’ 

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকি সত্ত্বেও পুরোনো মাটির ভবনে মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ক্লাসের জন্য আর কোনো কক্ষ নেই। তাই বাধ্য হয়ে টিনের ছাপরা দিয়ে একটি স্থানে পাঠদান করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুতফর রহমান বলেন, ‘এমনভাবে খোলা স্থানে এসএসএসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া ঠিক হয়নি। যদি শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকে, তবে শিফটিং হিসেবে ক্লাস নেওয়া যায়। এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। আর বিদ্যালয় ভবনটি দোতলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন হয়েছে।