স্পেনের কথা বলে যুবককে লিবিয়ায় পাচারের অভিযোগ, ১২ জনের নামে মামলা

মামলাপ্রতীকী ছবি

স্পেনে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে সুনামগঞ্জের এক যুবককে লিবিয়ায় পাচারের অভিযোগে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলাটি করা হয়।

এর আগে গত ২৭ নভেম্বর সিলেটের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ছেলে আলী হোসেনকে (২৮) পাচারের অভিযোগে একটি নালিশি দরখাস্ত করেছিলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের আবুল হক (৫৫)। পরে আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান দরখাস্তটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার জন্য কোতোয়ালি থানাকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আগামী ২ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমার দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলাটি নেওয়া হয়েছে।

মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা ফয়সল মিয়া (৪৫)। তিনি জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ফয়সলের ভাই মকবুল মিয়া (৫০), জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশা গ্রামের হাছান নূর (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৮), ছালাতুর রহমান (৩৫), সিরাজুল ইসলাম (৪৫) ও সামসুল ইসলাম (৪৫), আসামপুর গ্রামের এনাম (৩৬), সিলেট নগরের তপোবন এলাকার নজরুল ইসলাম (৪০), দিরাই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সালেহ (৪০), জগন্নাথপুরের পাড়ারগাঁও গ্রামের শাহীন (৩৫) ও শ্রীধরপাশা গ্রামের জিলু মিয়া (৪২)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী দলের সক্রিয় সদস্য। ফয়সল মিয়া ও মকবুল মিয়া সিলেট নগরে বসবাস করে বিদেশে লোক পাচার করে থাকে। অন্য আসামিরা তাঁদের দেশ-বিদেশের এজেন্ট। এই আসামিরা লোক সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় পাঠিয়ে সেখানে জিম্মি করে রাখে। পরে জোর করে টাকা আদায় করে। টাকা না দিলে নির্যাতন করে হত্যা করে।

আবুল হক মামলায় অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে তিনি ফয়সলের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকায় স্পেন পাঠানোর জন্য ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট মৌখিক চুক্তি করেন। এরপর ওই বছরের ২৯ আগস্ট, ২০ নভেম্বর ও ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি তিন দফায় তিনি সে টাকা পরিশোধ করেন। পরে তাঁর ছেলেকে স্পেনে না পাঠিয়ে কৌশলে আসামিরা লিবিয়ায় পাঠান। সেখানে থাকা পাচার চক্রের সদস্য তাঁর ছেলের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাতেন। আরও টাকা না পেলে তাঁকে হত্যা করার হুমকিও দেন চক্রের সদস্যরা। এর পর থেকেই আলী হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা আসামিদের চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আরও টাকা না দিলে আলী হোসেনকে আসামিরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না বলে জানান।

টাকা না পেলে আলী হোসেনকে দেশে আনা যাবে না, এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে নানা সময়ে আরও প্রায় ১০ লাখ টাকা বাদীর পরিবারের কাছ থেকে আসামিরা হাতিয়ে নেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। বাদীর পরিবার জানায়, এর মধ্যে আলী হোসেনকে অত্যাচার-নির্যাতনের কিছু ভিডিও ও অডিও রেকর্ড পরিবারের সদস্যদের কাছে আসে। এতে তাঁরা ভীত হয়ে পড়েন।

মামলার বাদী আবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ২৫ লাখ টাকা আসামিদের দিয়েছি। এরপরও ছেলের স্বার্থের বিষয়টি চিন্তা করে এত দিন মামলা করিনি। তবে সাড়ে তিন মাস ধরে ছেলের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এতে পরিবারের সদস্যরা শঙ্কায় আছি। এ অবস্থায় মামলা করতে বাধ্য হই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মামলার প্রধান আসামি ফয়সল মিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় আসামির মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। তাই তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।