তুরান–নাভার অপেক্ষায় খালপাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন দাদা নুরুল ইসলাম

নাতি–নাতনির অপেক্ষায় খালপাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন নুরুল ইসলাম। আজ সকালে লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘জীবিত আর পাব না, অন্তত মৃত অবস্থায়ও যদি ওদের পাওয়া যায় এই আশায় গতকাল শনিবার রাত থেকে খালপাড়ে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি।’

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালপাড়ে দাঁড়িয়ে আজ রোববার দুপুরে এসব কথা বলেন নুরুল ইসলাম। বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় তাঁর দুই নাতি–নাতনি তুরান (৮) ও নাভা (৫) এখনো নিখোঁজ।

ট্রলারডুবির ঘটনায় চলছে উদ্ধার অভিযান। পাড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় স্বজন ও স্থানীয় মানুষেরা। আজ রোববার সকালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকায়
ছবি: ফয়সাল হোসেন

গতকাল রাত আটটার দিকে লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ওই ট্রলার ডুবে যায়। এ ঘটনায় আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলো—মোকছেদা বেগম (৪০), হ্যাপি আক্তার (২৮), পপি আক্তার (৩০), পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সজিবুল (৪), হুমায়রা (৫ মাস), ফারিয়ান (৮) ও রাকিবুল (১২)। তাদের সবার বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার লতাব্দি ইউনিয়নে। এ ঘটনায় তুরান, নাবাসহ পাঁচজন এখনো নিখোঁজ।

নুরুল ইসলামের বাড়ি সিরাজদিখানের লতাব্দি ইউনিয়নের কয়ড়াখোলা এলাকায়। তুরান–নাবার বাবা আরিফ হোসেন সিঙ্গাপুরপ্রবাসী।

আরও পড়ুন

নুরুল ইসলাম বলেন, গতকাল তুরান ও নাভা তাদের মা সমাপ্তি আক্তারের সঙ্গে ট্রলারে করে পদ্মা সেতু দেখতে যায়। ট্রলারে তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন ছিল। বড় পদ্মায় কত ভয়, এ জন্য সন্ধ্যায় তাঁরা একবার খবর নিয়েছিলেন। তাঁরা ফোনে জানিয়েছিলেন, নিরাপদে বাড়ির দিকে আসছেন। রাত আটটার দিকে শুনতে পান ট্রলারটি ডুবে গেছে। এ দুর্ঘটনায় সমাপ্তিকে পাওয়া গেলেও এখনো দুই নাতি-নাতনিকে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে ট্রলারটি উদ্ধার করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা ট্রলারটির উদ্ধারকাজ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া স্থান থেকে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে।

ডুবে যাওয়া ট্রলারটি ক্রেনের সাহায্যে তোলা হচ্ছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকায়
ছবি: ফয়সাল হোসেন

ওবায়দুল করিম খান বলেন, ট্রলার থেকে কয়েকটি মুঠোফোন পাওয়া গেছে, তবে কারও লাশ পাওয়া যায়নি। স্বজনদের দাবি, ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনো পাঁচজন নিখোঁজ। তাঁদের মধ্যে দুটি শিশু ও তিনজন নারী রয়েছেন।

আজ সকাল থেকে রসকাঠি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের দুই পাড়ে উৎসুক জনতার ভিড়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর লোকজন অভিযান চালাচ্ছেন। তবে বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হচ্ছিল উদ্ধার অভিযান। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নিখোঁজ পাঁচজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দুপুরের পর লতাব্দি ইউনিয়নের নারী, শিশুসহ ৪৬ ব্যক্তি ট্রলারে পদ্মা নদীতে পিকনিকে যান। পিকনিক শেষে ট্রলারটি তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতাব্দির দিকে যাচ্ছিল। রাত আটটার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি তলিয়ে যায়।

আরও পড়ুন