পার্কে ‘চিড়িয়াখানা’, অযত্নে বন্য প্রাণী

খাঁচায় আটকে রাখা কয়েকটি বানর। ১ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার মেহেরুন পার্ক ও চিড়িয়াখানায়
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় অবৈধভাবে চিড়িয়াখানা চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও বেসরকারিভাবে চিড়িয়াখানার অনুমোদন না থাকলেও উপজেলার ইব্রাহিমপুরে মেহেরুন পার্কে অনুমোদনহীন চিড়িয়াখানায় টিকিটের বিনিময়ে বন্য প্রাণী প্রদর্শন করা হচ্ছে।

প্রতিকূল পরিবেশে বন্য প্রাণীদের আটকে রেখে যন্ত্রণা দেওয়া, পরিচর্যা না করা এবং নিয়মিত খাবার না দেওয়ার অভিযোগ তুলে পরিবেশবাদীরা কথিত এই চিড়িয়াখানা বন্ধে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে অনুরোধ করেছেন। এসব প্রাণীকে অবমুক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।

ভিএসও–প্রথম আলো স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা পাওয়া পরিবেশবিদ ‘পানকৌড়ি’র প্রতিষ্ঠাতা বখতিয়ার হামিদ বিপুল কথিত এই চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী আটকে প্রদর্শনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তিনি সেখানে বিভিন্ন বন্য প্রাণীকে প্রতিকূল পরিবেশে আবদ্ধ করে রাখতে দেখেছেন। খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, প্রাণীগুলোর ঠিকমতো যত্ন করা হয় না এবং নিয়ম মেনে খাবার দেওয়া হয় না। অযত্ন আর অবহেলায় কিছু প্রাণী মারাও গেছে।

সরেজমিনে একদিন

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে সড়কপথে ১৫ কিলোমিটার দূরে দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে মেহেরুন পার্ক ও চিড়িয়াখানার অবস্থান। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, স্থানীয় উদ্যোক্তা এ আর মালিক পরিত্যক্ত ইটভাটার জমিতে প্রায় ২০ বছর আগে পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। ছয়–সাত বছর ধরে সেখানে চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠার নামে বন্য প্রাণী আটকে রেখে টিকিটের বিনিময়ে প্রদর্শন করা হয়। বর্তমানে জনপ্রতি টিকিটের দাম ৩০ টাকা।

গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, পার্কে প্রবেশের পর উত্তর দিকের একটি টিনশেডের ভেতর ময়ূর এবং পাশেই বিদেশি মুরগি দেখতে পাওয়া যায়। তারের ছোট খাঁচায় হুতুমপেঁচা, প্রাচীরঘেরা মাঠে চিত্রা হরিণ এবং দক্ষিণ প্রান্তের টিনশেডে লোহার নেট দেওয়া ছোট ছোট ঘরে বানর, বাগডাশ ও বিদেশি কুকুর। বানরের খাঁচায় একটি পচা কলা পড়ে থাকতে দেখা গেলেও বাকি কোনো পশুপাখির সামনেই খাবার বা পানির পাত্র ছিল না। দুর্বল একটি উটপাখিকে খোলা মাঠে চলতে দেখা যায়। নিয়মানুযায়ী চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনার জন্য একজন প্রাণিসম্পদ–বিশেষজ্ঞ সেখানে দায়িত্বে থাকার কথা। অথচ পার্কের সাধারণ কর্মচারীদের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, অযত্ন আর অবহেলার কারণে সম্প্রতি একটি উটপাখি, ইমুসহ পশুপাখি মারা গেছে।

শুক্রবার পার্ক ও চিড়িয়াখানায় ৪০-৫০ জন দর্শনার্থী এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন জানান, এখানে এসে তাঁর ভালোই লাগছে।

পার্ক ও চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার সাগর আলী বলেন, সেখানে বর্তমানে ৩৩টি চিত্রা হরিণ, একটি বাগডাশ, তিনটি ময়ূর, অর্ধশতাধিক বিদেশি মুরগি, তিনটি বানর, একটি বিদেশি কুকুর, একটি উটপাখি ও দুটি পেঁচা আছে। এর আগে একটি উট ছিল। গত কোরবানির সময় ১৮ লাখ টাকায় সেটি বিক্রি করা হয়েছে। সাগর দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী এ আর মালিক তাঁদের জানিয়েছেন, সরকারি অনুমতি নিয়েই এই চিড়িয়াখানা পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বন আইন অনুযায়ী বেসরকারিভাবে চিড়িয়াখানা স্থাপন করার সুযোগ নেই। বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্ল্যা পাটোয়ারী জানান, আইনে বেসরকারিভাবে চিড়িয়াখানা স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।

বন অধিদপ্তর, খুলনা অঞ্চল খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, বণ্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী দেশি বন্য প্রাণী এভাবে পালন ও প্রদর্শন এবং চিড়িয়াখানা স্থাপনের সুযোগ নেই।