আগামী শনিবার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে বরিশালে বিএনপির রাজনীতি আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। বিএনপি চাইছে সব বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে যেকোনো উপায়ে বড় জমায়েত করা, সরকারবিরোধী অবস্থান শক্তভাবে জানান দেওয়া। আর আওয়ামী লীগ মাঠে নেমেছে নিজেদের জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তির প্রমাণ দিতে।
দুই পক্ষের এমন পরস্পরমুখী অবস্থানের কারণে বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা। গতকাল মঙ্গলবার দুই দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন অবস্থানের কথা জানা গেল।
এরই মধ্যে গত সোমবার উজিরপুরে বিএনপির প্রচারণায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে ওই হামলায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। একই দিন রাতে যুবলীগের মিছিল থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে নগরের গড়িয়ারপাড় এলাকায়। এ ছাড়া গতকাল বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি বাজারে সমাবেশের পক্ষে লিফলেট বিতরণ ও পথসভায় পুলিশের লাঠিপেটা করার অভিযোগ এনেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেনসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, ১১ নভেম্বর ঢাকায় যুবলীগের মহাসমাবেশ হবে। ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দল গোছানো, নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার জন্য সারা দেশেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় যুবলীগের মহাসমাবেশ সফল করতে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে ধারাবাহিক মিছিল ও সমাবেশ করা হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিএনপি দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় গণসমাবেশ করে মাঠ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। দলটি এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরানোর কৌশল নিয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে বলে দেশে-বিদেশে প্রচার করছে। এটাকে রাজনৈতিক অপকৌশল বলে মনে করছেন তাঁরা। বিএনপির এই অপকৌশল রোধের জন্যই তাঁরা মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, ৫ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের জনস্রোত রুখতে আওয়ামী লীগ উল্টো অপকৌশল নিয়েছে। মানুষ যাতে সমাবেশে যোগ না দেয়, সে জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতে দলের ক্যাডারদের দিয়ে আগাম মহড়া, পথে পথে বাধা, মারধর, নির্যাতনের পথে এগোচ্ছে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সবশেষ রংপুরে এটা করেছে। একইভাবে বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ সব ধরনের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। মানুষের বাঁধভাঙা স্রোত ঠেকানো যায়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ৫ নভেম্বর বরিশাল নগরে বিএনপির বড় জমায়েত ঘিরে আওয়ামী লীগের এ ধরনের কর্মসূচি সংঘাত ও অস্থিরতাকে অনিবার্য করে তুলতে পারে। দুই পক্ষেরই এ জন্য পরস্পরের প্রতি সহিষ্ণু ও সংযত হওয়া প্রয়োজন।
বরিশাল নগরে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ঢাকায় যুবলীগের মহাসমাবেশ হবে। সেখানে আমরা বরিশাল থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে যোগ দেবেন। তাই নিজেদের সংগঠিত করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।’
রাজনীতি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপির রাজনীতি অনেকটাই নির্জীব হয়ে পড়েছিল। সমাবেশ ঘিরে তাঁরা এখন বেশ চনমনে। বিভাগের ছয় জেলা এবং ৪২টি উপজেলায় দলীয় কার্যালয়গুলোও সরগরম হয়ে উঠেছে। চলছে সমাবেশে যোগদানের প্রস্তুতি, বাধা উপেক্ষা করার কৌশল নির্ধারণ। দিনরাত নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা ও পথসভায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা জেলা বিএনপির অন্তত ৯ জন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, লঞ্চ, বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ করে দিলে যাতে এসব জেলা থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বরিশালে যেতে পারেন, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেই তাঁরা প্রস্তুতি রেখেছেন। এমনকি অনেক জেলা উপজেলা থেকে দু-তিন দিন আগেই নগরের আশপাশের এলাকায় ও পাশের জেলা, উপজেলায় গিয়ে অবস্থান নিতে পারেন—এমন কৌশলও আছে।
গণসমাবেশের মাঠ পরিদর্শন
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের মাঠ (বেলস পার্ক) পরিদর্শন করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিনা রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশালের গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরা নগরের লঞ্চঘাট–সংলগ্ন ডিসিঘাট এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় প্রস্তুতি সভায় যোগ দেন।