খালের ৮ জায়গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ 

খালের এক কিলোমিটারে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় কয়েকজন। এতে খালপারের কৃষিজমি ও ঘরবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

পটুয়াখালীর সদর উপজেলার মাদারবুনিয়ায় পশ্চিম হেতালিয়া ও বিরাজলা গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হেতালিয়া ও দক্ষিণ বিরাজলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। সরকারি খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। খালটি একসময় ১৫ থেকে ১৬ ফুট প্রস্থ থাকলেও বাঁধ ও ভরাটের কারণে এখন এটি সরু হয়ে গেছে। খালের প্রায় এক কিলোমিটার অংশের আট জায়গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় কয়েকজন। বাঁধ দেওয়ায় খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাছ চাষের কারণে শুকনা মৌসুমে খালের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না কৃষকেরা। বিপরীতে বর্ষার সময় খালের পানি উপচে খালপারের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। খালপারের দুই গ্রামের অন্তত ৫০০ একর কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ ঘটনায় খালের বাঁধ অপসারণে পদক্ষেপ চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি আবেদন করেছেন স্থানীয় আবদুল খালেক আকন নামের এক ব্যক্তি। গত ৩০ জুন সদরের ইউএনও মো. সাইফুর রহমান বরাবর তিনি এ আবেদন করেন।

ইউএনও মো. সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রবহমান খালে বাঁধ দেওয়ার নিয়ম নেই, এটি অপরাধ। স্থানীয় কৃষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবেদনে বলা হয়, সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হেতালিয়া ও দক্ষিণ বিরাজলা গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি এখন বদ্ধ খালে পরিণত হয়েছে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে খালটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সাড়ে তিন কিলোমিটার খালের মধ্যে হেতালিয়ার কোড়ালিয়ার ইয়াকুব হাওলাদারের বাড়ি-সংলগ্ন জায়গা থেকে জিন্নাত খাঁর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশে আট জায়গায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বছরখানেক আগে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ওই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। বাঁধ দেওয়ায় বর্ষায় খাল দিয়ে এলাকার কৃষিজমির পানি সরানো যায় না। এতে পশ্চিম হেতালিয়া ও দক্ষিণ বিরাজলা গ্রামের অন্তত ৫০০ একর কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব জমিতে আমনের চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

বিরাজলা গ্রামের শাহজাহান বিশ্বাস তাঁর বাড়ির সামনে খালের মধ্যে গোয়ালঘর নির্মাণ করে গবাদিপশু রাখছেন। ভরাট করায় সেখানে খালটি সরু হয়ে গেছে। শাহজাহান বিশ্বাস বলেন, গোয়ালঘরটি তাঁর নিজের সম্পত্তিতে তৈরি করেছেন। খালের অপর পাড়ে হেতালিয়া গ্রামের শহিদুল ফকির খাল ভরাট করে বাগান করেছেন। 

এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে ২০ জুলাই উপজেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। একটি প্রবহমান খালে কোনোভাবেই বাঁধ দেওয়া যাবে না।