টাঙ্গাইলের বধ্যভূমিটি একখণ্ড ইতিহাস 

গণহত্যা দিবসে প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন গণহত্যার শিকার শহীদদের।

টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

টাঙ্গাইল জেলা সদর পানির ট্যাংকের পাশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অনেক মানুষকে ধরে এনে হত্যা করেছে। পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মমতা এবং স্বাধীনতার জন্য মানুষের ত্যাগের প্রতীক হয়ে রয়েছে এই বধ্যভূমি।

গণহত্যা দিবসে (২৫ মার্চ) জেলা প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার শিকার শহীদদের প্রতি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন জানান, ১৯৭১ সালে ৩ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। তারা সদর এলাকায় সার্কিট হাউসে ঘাঁটি স্থাপন করে। সার্কিট হাউসের পেছনে নির্মাণাধীন সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনে নির্যাতন কেন্দ্র স্থাপন করে। সেখানে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। পরে তাঁদের পানির ট্যাংকের পাশে নিয়ে গুলি করে বা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হতো। কতজনকে এখানে হত্যা করা হয়েছে, সে পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। 

সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সেকান্দার হায়াত জানান, ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। তারপর অনেকেই হারানো স্বজনদের খোঁজে পানির ট্যাংকের পাশে আসেন। তখন সেখানে মানুষের হাড়গোড়, মাথার খুলি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

১৯৯৬ সালে প্রথম সরকারিভাবে বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০২ সাল থেকে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রতিবছর ২৫ মার্চ কালরাতে আলোর মিছিলসহ এ বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। ২০০৯ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ২০১৯ সালে বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ, সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সরেজমিন শুক্রবার ওই বধ্যভূমিতে গিয়ে দেখা যায়, বধ্যভূমির দেয়ালে টেরাকোটায় তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের চিত্র। এ ছাড়া শহীদদের উৎসর্গকৃত ও বধ্যভূমি নিয়ে রচিত কবিতা স্থান পেয়েছে সেখানে।

গণসংগীতশিল্পী এলেন মল্লিক জানান, শহরে গেরিলা অপারেশন চালাতে এসে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দী হন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজের ছাত্র সালাউদ্দিনকে নির্যাতনের পর এই পানির ট্যাংকের পাশে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।  এ বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় সুশীল কুমার সাহা নামের এক ব্যবসায়ীকে। সদর উপজেলার শিবপুর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন সুশীল কুমার সাহা। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুব বলেন, কতটা ত্যাগের বিনিময়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীন দেশ পেয়েছে, তার প্রতীক এই বধ্যভূমি। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের যে কান্নার আওয়াজ একদিন এই বধ্যভূমিতে উঠেছিল, তা আজ আনন্দের অশ্রুতে পরিণত হয়েছে। এ বধ্যভূমি যেন মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার একখণ্ড ইতিহাস।