টিলায় টিলায় বাসকের বাগান, ঔষধি গাছে বাড়তি আয়ের সুযোগ
পাহাড়ি সড়কের দুই ধারে উঁচুনিচু টিলা। টিলার এখানে-সেখানে কাঠবাগানের নিচে সারি সারি সবুজ গাছ, দূর থেকে দেখতে অনেকটা চা-বাগানের মতো। কাছে গেলে দেখা যায়, এগুলো ঔষধি গাছ বাসক। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়–সংলগ্ন এলাকায় এর দেখা মেলে।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের অধীন শ্রীবরদী উপজেলার বালিঝুড়ি রেঞ্জের উদ্যোগে বালিঝুড়ি, কনঝুড়া, মালাকুচা ও ডুমুতলা এলাকার প্রায় ৩৫০ হেক্টর টিলায় গড়ে উঠেছে বাসকের ‘সুফল বাগান’। এসব বাসকগাছের পরিচর্যায় তেমন সার ও কীটনাশক লাগে না। শুধু দেখেশুনে রাখতে হয়। দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এসব এলাকার উপকারভোগীরা বিনা খরচেই পাচ্ছেন বাড়তি আয়। এতে বনাঞ্চলসংলগ্ন পাহাড়ি বাসিন্দাদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বন বিভাগের সূত্র জানায়, ওই চার এলাকার সুফল বাগানে ৮ দলের ৪৮০ জন উপকারভোগী যুক্ত আছেন। ২০১৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কাঠবাগানের নিচে বাসকগাছ রোপণ করে দ্রুত সাফল্য মেলে। পাহাড়ি মাটি বাসক চাষের উপযোগী হওয়ায় দ্রুত বাড়তে থাকে। ব্যাপক চাহিদার কারণে বাড়ানো হয় চাষের পরিধি।
বর্তমানে প্রায় ৩৫০ হেক্টর বনভূমিজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে বাসকের বাগান। চলতি বছর দরপত্রের মাধ্যমে ১৮০ হেক্টর এলাকার বাসকপাতা কেজিপ্রতি ৪ টাকা দরে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। শিগগিরই এসব অর্থ উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের রাজারপাহাড়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে ঔষধি গাছের বাগান। সেখানে কয়েকজন উপকারভোগী জানান, ২০১৯ সালে বাসকগাছ লাগানোর পর এক বছরের মাথায় পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের পর শুকিয়ে কেজি দরে বিক্রি করা হয়। গরু-ছাগলও এসব গাছের পাতা খায় না। শুকনা মৌসুমে বছরে দুই দফা পাতা সংগ্রহ করা যায়।
কনঝুড়া এলাকার উপকারভোগী নুরেজা বেগম বলেন, ‘এই পাতায় যে বাড়তি আয় হইব, আগে বুঝবার পাইতাম না। এখন বছরে দুইবার পাতা বিক্রি হয়। গরিব মানুষ অনেক উপকার পাইছে।’
বালিঝুড়ির উপকারভোগী আবদুল মুতালেব আকন্দ বলেন, ‘বাসকের জন্য এই পাহাড়ি মাটি খুবই উর্বর। কোনো খরচ লাগে না, শুধু দেখে রাখি। পাতা বিক্রির সব টাকা আমরা উপকারভোগীরা পাব। এতে গ্রামের মানুষদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হইছে।’
কনঝুড়া বিট কর্মকর্তা আবু হাসেম চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের মাটি বাসকের জন্য আদর্শ। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে চার এলাকায় সুফল বাগানে এসব গাছ লাগানো হয়েছে। তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গাছ বিক্রির উপযোগী হয়। শুকনা মৌসুমে দুবার পাতা সংগ্রহ করা যায়।
শ্রীবরদী বালিঝুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, প্রথম ধাপে ১৮০ হেক্টর জমি থেকে ৬০ হাজার ৬০০ কেজি পাতা বিক্রি হয়েছে। আরও তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ কেজি পাতা সংগ্রহ করা হবে। দরপত্রের মাধ্যমে গাইবান্ধার এক ব্যক্তি এগুলো সংগ্রহ করছেন। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো বাসকের পাতা দিয়ে কাশির সিরাপ তৈরি করে। তাই এ পাতার চাহিদা সব সময় থাকে।