সোনাগাজীতে পুলিশের মামলায় অজ্ঞতপরিচয়ের আসামি, নেই সংখ্যার উল্লেখ, গ্রেপ্তার–আতঙ্কে মাঠছাড়া বিএনপি

অবরোধের সমর্থনে বিএনপির নেতা–কর্মীরা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। ৫ মে ফেনীর সোনাগাজীর কাশ্মীর বাজারে
প্রথম আলো

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় গত ১৫ দিনে দুটি মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ এবং সারা দেশে ২৯ অক্টোবর হারতালের পর পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত নানা ঘটনায় সোনাগাজীতে পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে বিএনপির বিভিন্ন নেতা–কর্মীকে আসামি করা হলেও অজ্ঞতপরিচয় ব্যক্তিদেরও রাখা হয়েছে আসামি হিসেবে। তবে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে এই দুই মামলায় পুলিশ চাইলেই যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা।

পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান ও কঠোর তৎপরতার কারণে এবং গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে উপজেলায় কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি পালনে মাঠে দেখা যাচ্ছে না বিএনপির নেতা-কর্মীদের। এর আগে উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা হলেও এবারই প্রথম এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, কয়েক দিন ধরে পুলিশ রাতের বেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করছে। মামলা না থাকলেও সরকারদলীয়দের ইন্ধনে দলের নিরপরাধ কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার করে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা জানান।

মহাসমাবেশের পরদিন গত ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতাল ডাকে বিএনপি। ওই দিন রাতে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মতিগঞ্জ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমিন উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুল আলম, উপজেলা যুবদলের সদস্য মোশারফ হোসেনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামাদেরও আসামি করা হয়। তবে অজ্ঞতনামা আসামিদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এ মামলার বাদী সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম। মামলায় শামছুল আলম, মোশারফ হোসেনসহ ইতিমধ্যে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, হরতাল পালনের লক্ষ্যে সোনাগাজী-ফেনী সড়কের মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতকান্দি পানের বর এলাকায় সড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ, টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

এদিকে, মামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ২৯ অক্টোবর তিনি এলাকাতেই ছিলেন না। চিকিৎসার কাজে বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকায় আছেন তিনি। অযথা একটি ঘটনা সাজিয়ে পুলিশ তাকে আসামি করেছে। আওয়ামী লীগকে খুশি করতে গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।

উপজেলায় পুলিশের মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা যায়। হরতাল ও একে একে চতুর্থ দফার অবরোধ কর্মসূচি পালনে উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঠে তেমন একটা দেখা যায়নি।

অপর মামলাটি হয় ৫ নভেম্বর। ওই দিন সকালে অবরোধের সমর্থনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পৌরশহর ও সোনাগাজী-ফেনী সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। অবরোধ চলাকালে নাশকতা, গাড়ি ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ ও ককটেল বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সিরাজুল হক চৌধুরী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ মামলায় উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো. নুরুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মো. সবুজ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রিংকু, ছাত্রদল নেতা ইমাম হোসেনসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে আগেরটির মতো এটিতেও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। এ মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঁইয়া বলেন, থানায় মামলা হওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা দলীয়ভাবে দুটি এলাকায় খবর নিয়েছেন। হরতাল ও অবরোধে উপজেলার কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ অযথা গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমাতে চেষ্টা করছে। এসব মামলা দিয়ে বিএনপির সরকার পতনের একদফা আন্দোলনকে থামানো যাবে না।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভা মেয়র রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোনাগাজীর কোথাও যাতে করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করে জনগণের জানমালের ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে সক্রিয় অবস্থান নিয়ে খেয়াল রাখছে।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম বলেন, বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, ককটেল বিস্ফোরণ ও যান চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাজ হলো মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। পুলিশ কাউকে অযথা হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে না। সুনির্দিষ্ট মামলা ও অভিযোগের ভিত্তিতে নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করছে। এ ছাড়া উপজেলা বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।