এখনো প্রচারে নামেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা

খুলনা জেলার মানচিত্র

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারের আট দিন পেরিয়ে গেলেও খুলনায় এখনো প্রচার শুরু করেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। কোনো এলাকাতেই তাঁদের কোনো পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং বা অন্য কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। খুলনা মহানগরসহ জেলার ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

গত রোব ও সোমবার খুলনার তিনটি (১, ৩ ও ৬ নম্বর) আসন ঘুরে দেখা গেছে, প্রচারণায় সময় ব্যয় করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। পাশাপাশি আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। বিভিন্ন জায়গায় টানানো হয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টারও। কিন্তু ওই তিনটি আসনের কোথাও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়েনি। এমনকি তাঁদের গণসংযোগ বা প্রচারপত্র বিতরণের খবরও কোথাও পাওয়া যায়নি।

নেতা–কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে খুলনায় জাতীয় পার্টিকে কোনো আসন ছেড়ে না দেওয়ায় নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে তাঁরা এখনো প্রচারে নামেননি। এবারের নির্বাচনে খুলনায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা কেমন হবে, তা–ও নির্ধারণ করা হয়নি। এসব কারণেই প্রার্থী ও নেতা–কর্মীরা প্রচারে মাঠে নামছেন না। অন্যদিকে এবারের নির্বাচন হচ্ছে প্রায় একতরফা। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। জাতীয় পার্টির সেখানে কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়া মানে শুধু শুধু টাকা নষ্ট করা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় মহানগরসহ ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে। আসনগুলোতে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আসন ভাগাভাগির সময় জোর দাবি তোলা হয়েছিল খুলনা-৬ আসনের (কয়রা-পাইকগাছা) জন্য। শেষ অবধি চলছিল দেনদরবারও। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতা–কর্মীরা।

খুলনা-১ আসনের (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী হাসানুর রশীদ বলেন, ‘আমরা কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এখনো নির্বাচনী প্রচারে সেভাবে নামিনি। আমরা ঢাকায় গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

খুলনা-৩ আসনে (খালিশপুর-দৌলতপুর) জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলটির খুলনা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়েই মূলত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই জটিলতা সৃষ্টি হয়। ওই আসনগুলোর বাইরে আমরা যাতে ভোট না পাই, সে ধরনের একটা কাজ হয়ে গেছে। এখন তো মানুষ আমাদের দালাল বলছে। আমরা ভোটারদের কাছে গিয়ে কী বলব? কর্মীরা হচ্ছে দলের প্রাণ, সেই কর্মীরাই প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে চাইছে না।’

দলের নেতা–কর্মীরা আরও বলেন, ২০ ডিসেম্বর খুলনা নগরের ডাকবাংলো মোড়ের জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর শাখার যৌথসভায় প্রার্থী এবং দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। সভায় জাতীয় পার্টির জেলা, মহানগর এবং সব উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি খুলনা সিটি নির্বাচনেও মেয়র পদে দলটির প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর জামানত বাতিল হয়েছিল।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা বিভাগ সব সময় অবহেলিত। মানুষের মনে কষ্ট আছে, এভাবে সাজানো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কেন গেল? জাতীয় পার্টি কি ২৬টি আসন পাওয়ার যোগ্য? আমরা তো আশা করেছিলাম খুলনা-৬ আমাদের দেবে। এ কারণে আওয়ামী লীগে সেখানে ভালো প্রার্থীও দেয়নি। যাকে প্রার্থী দিয়েছে, তাঁকে অনেকেই চেনেনই না। এ কারণে সবাই আফসোস করছে, সবার মন ভেঙে গেছে। আমরা এখনো আশা করছি, কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন বর্জন করবে।’