জীবননগর-কালীগঞ্জ পথে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ ৩ বছর

যশোর ও কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে তিন বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোরে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ।

  • যশোর ও কালীগঞ্জ মালিক সমিতি ২০২০ সালে ১৬টি ট্রিপ দাবি করে।

  • এই দাবি না মানায় ডিসেম্বরে  যশোর থেকে চুয়াডাঙ্গার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

চুয়াডাঙ্গা-যশোর রুটে জীবননগর-কালীগঞ্জ হয়ে সরাসরি বাস চলাচল প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ। মোটর মালিক সমিতিগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন এই পথের কয়েক লাখ যাত্রী চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোরে যাতায়াত করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, মোটর মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে চুয়াডাঙ্গা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও আন্তজেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের বাসগুলো জেলার শেষ সীমানা জীবননগর উপজেলার হাসাদহ পর্যন্ত চলাচল করছে। অপর দিকে যশোর ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির বাসগুলো হাসাদহ থেকে যশোর পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে।

সাধারণত চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ এই পথে চলাচল করেন। অনেকেই জরুরি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোরে যান। তবে দফায় দফায় বাসবদল, শ্রমিকদের খেয়ালখুশি বাস চালনা ও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের ঘটনায় যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন। এতে তাঁদের অর্থ ও কর্মঘণ্টা দুই-ই অপচয় হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রথম আলোকে জানান, বিষয়টি নিয়ে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভায় আলোচনা করে সরাসরি বাস চলাচলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যশোরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলা সীমানা পর্যন্ত বাস চলাচল শুরুর পর থেকে উভয় দিকের বাসগুলোর গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিটি স্টপেজে পেছনের বাস পৌঁছানোর পর সামনের বাস ছেড়ে থাকে। শ্রমিকেরা নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়াও যেখানে-সেখানে যাত্রী তুলছেন ও নামাচ্ছেন। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগে। তা ছাড়া অতিরিক্ত কিলোমিটার দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, যে সময়ে সরাসরি বাস চলত, ওই সময়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোর পৌঁছাতে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা থেকে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট সময় লাগত। সেখানে বর্তমানে আরও এক ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। 

যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাহমুদ আল আরাফাত অভিযোগ করেন, সন্ধ্যার পর যশোর থেকে বাসে চুয়াডাঙ্গা ফেরার পথে মাঝেমধ্যেই হাসাদহে চুয়াডাঙ্গাগামী বাস পাওয়া যায় না। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির বাসগুলো চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত চলাচল করত। অবৈধ যানবাহনের দাপটে যশোর ও কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতি ২০১০ সালে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়ক থেকে তাদের বাস গুটিয়ে নেয়। এরপর রোটেশনের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা-যশোর রুটে বাস পরিচালনা শুরু হয়। অপর দিকে চুয়াডাঙ্গার মোটর মালিকেরা চুয়াডাঙ্গা-যশোর রুটের পাশাপাশি কুষ্টিয়ার সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া পথে আলমডাঙ্গা হয়ে আলাদাভাবে বাস পরিচালনা শুরু করেন।

২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে যশোর ও কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতি আগের মতো আলমডাঙ্গা পর্যন্ত অন্তত ১৬ ট্রিপ দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে ওই বছরের ১০ অক্টোবর কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির কার্যালয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চুয়াডাঙ্গা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও আন্তজেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের নেতারা ১০টি ট্রিপ দিতে সম্মত হন। তখন যশোর ও কালীগঞ্জের পরিবহন সমিতির নেতারা  তাঁদের গাড়ি পরিচালনায় উভয় পথে টানা দুই ঘণ্টা করে সময় চেয়ে বসেন। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার নেতারা সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ১৫ দিন সময় চেয়ে নেন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গায় সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা এতে আপত্তি তোলেন। দাবি পূরণ না হওয়ায় যশোর ও কালীগঞ্জের মালিকেরা ৬ ডিসেম্বর যশোর থেকে চুয়াডাঙ্গা মালিকদের সব বাস যাত্রী নামিয়ে খালি ফেরত পাঠিয়ে দিলে সরাসরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার ও ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আনারুল আজিমের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাঁরা চাইলেই দ্রুত সমাধান হতে পারে।’

কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য আনারুল আজিম দাবি করেন, কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতি অনেক পুরোনো সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে যশোর থেকে আলমডাঙ্গা পর্যন্ত যশোর ও কালীগঞ্জের গাড়ি চলাচল করত। চুয়াডাঙ্গার মালিকেরা কুষ্টিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁদের বিতাড়িত করতে চান। সেই ষড়যন্ত্রের কারণে বাস জেলা সীমানা পর্যন্ত চলছে। আনারুল বলেন, সমাধান খুবই সহজ ব্যাপার। চুয়াডাঙ্গার মোটর মালিকেরা নিয়মের মধ্যে এলে, কথা রাখলেই সমাধান। কিন্তু তাঁরা কথা দিয়ে কথা রাখেন না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০-১২ দিন আগে কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিনকে সমঝোতার প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এলাকায় ফিরলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়ে যাবে।’