সব জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষের স্বার্থ নিয়ে কথা বলার আহ্বান

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। শুক্রবার বিকেলে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সিলেটে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বাংলাদেশের সব জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক লোকমান আহমদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাসদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘ক্ষমতার বাইরে থাকলে রাজনৈতিক দায় চলে যায় না। আমরা সবাই জানি, কাদের হাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি নিয়ে খুব কম কথা বলা হয়, এটা শুধু আদিবাসীদের সমস্যা নয়। যারা সবার চুক্তি ভঙ্গ করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আপনারা হাল ছেড়ে দেবেন না। যখন ভালো মানুষেরা চুপ করে থাকেন, তখন দুর্বৃত্তরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।’

সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাই, স্বাধীনতার ৫২ বছরে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা কোনো না কোনোভাবে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। আমরা আসলে ধরেই নিয়েছি, দল পরিবর্তনের সংস্কৃতির শেষ নেই। কিন্তু বর্তমানে খেয়াল করছি, দল বদলের ব্যাপারটাও অনুপস্থিত। আমি খুবই আশান্বিত হয়েছি এখানে এসে, আজকে অনেক রাজনৈতিক দলের চিন্তক, নীতিনির্ধারক এখানে উপস্থিত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হওয়ার জন্য। কিন্তু কোথায় তারা? তাদের সেবার দায় নেই। রাজনৈতিকদের উঠে দাঁড়াতে হবে, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে রাজনৈতিক দায় চলে যায় না।’

বাসদের সিলেট জেলার আহ্বায়ক আবু জাফরের সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য কামরুল আহসান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এন্ডরু সোলেমার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বক্তারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি ও ভাষার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বহু জাতি ও ভাষার মানুষ বসবাস করেন। এটিই একটি দেশের সৌন্দর্য। এসব জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, যেটি কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতির না হয়। মূলত সব জাতির, সব ভাষার মানুষের জন্য হবে রাষ্ট্র।

সংহতি সমাবেশের শুরুতে উদীচী ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সিপিবি সিলেটের সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেটের সভাপতি সিকান্দর আলী, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সিলেটের আহ্বায়ক উজ্জল রায়, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ সিলেটের সভাপতি সিরাজ আহমেদ, জাসদ সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস আহমেদ, ঐক্য ন্যাপ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বাবুল, গণতন্ত্রী পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমেদ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে চাকমা, গারো, খাসিয়া, মারমা, চা-শ্রমিক সবার রক্ত জড়িয়ে আছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর কী হলো? ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রমোশন দেওয়া হলো। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে সরাসরি বাঙালি। একটি জাতি কি আরেক জাতিতে কখনো রূপান্তরিত হতে পারে? বৈচিত্র্যের মধ্যে যে দেশ গড়ে উঠেছিল, তা স্বাধীনতার পর হয়ে গেল বাঙালির দেশ।