সার উৎপাদন শুরুর দিনে আবারও বন্ধ হলো সিইউএফএল কারখানা
গ্যাস–সংকটে টানা সাড়ে ছয় মাস বন্ধ থাকার গতকাল রোববার ভোরে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সারকারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল)। তবে এক দিন না পেরোতেই কারিগরি ত্রুটির কারণে আবারও ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে কারখানাটিতে। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে কারখানাটিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
সিইউএফএলের উৎপাদন বিভাগীয় প্রধান উত্তম চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর উৎপাদন শুরু হওয়ায় এমন কারিগরি ত্রুটি হয়েছে। কারখানা আবারও স্টার্টআপে (কারখানা চালুপ্রক্রিয়া) আছে। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে আবারও উৎপাদন পুনরায় শুরু করতে সক্ষম হব।’
গ্যাস–সংকটের কারণে এর আগে ১১ এপ্রিল কারখানাটিতে ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সাড়ে ছয় মাস পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় গতকাল ভোরে কারখানাটিতে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছিল।
কারখানা সূত্র জানায়, সিইউএফএল চালু থাকলে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা যায়। প্রতি মেট্রিক টন সার ৩৮ হাজার টাকা হিসেবে কারখানাটিতে দৈনিক ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার সার উৎপাদিত হয়।
কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর ধরে কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো গ্যাস–সংকটে দীর্ঘ সময় বন্ধ থেকেছে কারখানাটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধু পাঁচ দিন চালু ছিল সিইউএফএল কারখানা। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। টানা ১০ মাস বন্ধের পর গত ১৩ অক্টোবর সিইউএফএল চালু হয়। তবে এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দীর্ঘ সময় লাগে কারখানাটি চালু করতে। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার সময় কারখানা চালু হলেও ১১ এপ্রিল গ্যাস–সংকটে আবারও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর জাপানের কারিগরি সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা উপজেলার রাঙ্গাদিয়ায় সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। কারখানা চালু হওয়ার সময় দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৫ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন ক্ষমতা ছিল। তবে বর্তমানে দৈনিক ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করতে সক্ষম কারখানাটি। পাশাপাশি দৈনিক ৮০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক ৩ লাখ ১০ মেট্রিক টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করতে পারে সিইউএফএল।
সিইউএফএল সূত্র আরও জানায়, পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এই কারখানায় দৈনিক ৪৮ থেকে ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাস–সংকট ও যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় গত অর্থবছর কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। অবশিষ্ট ১৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।