‘চা খাওয়ার জন্য’ ২০০ টাকা নিয়ে বিপাকে তিন পুলিশ সদস্য

ফেনীতে বাঁশবাহী একটি ট্রাক। গতকাল রাতে তোলাপ্রথম আলো

ফেনীতে ‘চা খাওয়ার জন্য ২০০ টাকা নিয়ে’ বিপাকে পড়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। তাঁদের বিরুদ্ধে বাঁশবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। ফেনী মডেল থানা-পুলিশের এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) ওই তিন পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল রোববার মধ্যরাতে ফেনী শহরের জিরো পয়েন্ট–সংলগ্ন ট্রাংক রোড এলাকায় ট্রাক থেকে টাকা নিয়েছিলেন বলে ওই তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ। এ ঘটনা কয়েকজন যুবক দেখতে পেয়ে থানায় অভিযোগ করলে ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানিয়েছেন, প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুস শুক্কুর, কনস্টেবল জাহিদ ও আনন্দ মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে অতিরিক্ত মালবোঝাই একটি বাঁশবাহী ট্রাক যাচ্ছিল। এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার একজন চালক ট্রাকটিকে থামার সংকেত দেন। ট্রাকটি থামলে অটোরিকশার চালক সেই গাড়ি থেকে ২০০ টাকা নিয়ে অটোরিকশায় থাকা পুলিশ সদস্যদের হাতে তুলে দেন। বিষয়টি দেখতে পান কয়েক যুবক। মুহূর্তে তাঁরা অটোরিকশার চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের নির্দেশে এমন কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেন। যুবকেরা বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান। পরে রাত দেড়টার দিকে ফেনী মডেল থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও অভিযোগকারী যুবকদের থানায় ডেকে নেন। এরপর ওই রাতেই পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়।

ফেনী শহরের পশ্চিম ডাক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, ‘রোববার রাতে আমরা বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে বসে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চা খাচ্ছিলাম। এ সময় বাঁশভর্তি একটি ট্রাক শহীদ মিনার এলাকায় দাঁড়ালে পুলিশের সঙ্গে থাকা সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক ওই ট্রাকচালকের কাছ থেকে কিছু একটা নিয়ে আসেন। সন্দেহ হলে আমরা অটোরিকশার চালককে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করে বলেন, পুলিশের কথামতো তিনি ট্রাকচালকের কাছ থেকে চা খাওয়ার কথা বলে ২০০ টাকা নিয়েছেন।’

ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা মিললে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপাতত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত থাকবেন।

ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে প্রাথমিক তদন্তে দুজনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে।