কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে বেশি: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়াপাড়াতে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঢেউটিন তুলে দেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজারে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সরকার জনগণের পাশে রয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের পৌরসভা এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই শতাধিক পরিবারকে ঢেউটিন বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন। ঢেউটিন ছাড়াও এলাকার কয়েক শ মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করেন এনামুর রহমান।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের কারণে জেলায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।

দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছেই পৌরসভা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি দেখতে যান ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ত্রাণ বিতরণ শেষে প্রতিমন্ত্রী মহেশখালী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। পরে ফিরে এসে বিকেল পাঁচটায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, বাসিন্যাপাড়া, সমিতিপাড়াসহ পাঁচটি গ্রামে অন্তত ৪০০ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অধিকাংশ পরিবার ছিল খোলা আকাশের নিচে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের প্রায় সবই শ্রমজীবী মানুষের। পাশের নাজিরারটেক উপকূলে গড়ে ওঠা ৭০০টির বেশি শুঁটকি মহালে কিংবা শহরে রিকশা-টমটম চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরা। পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘১, ২ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ১৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবার কাছে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনে জেলার ৯ উপজেলা ও দুই পৌরসভায় ৪২ হাজার ৯৫৯টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি ঘর। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৪৯টি ঘরবাড়ি।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার ৪ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ। প্রায় ৮০০ স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। ৩৫৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে, বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভার প্রায় অর্ধেক এলাকা এবং মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪২), মহেশখালীর উপজেলার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া উপজেলার আশকার আলী (৪৫)। এর মধ্যে খালেক ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে এবং অপর দুজনের গাছচাপায় মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন।